পোশাক শিল্পের ইতিহাসঃ-
মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার
মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বস্ত্র। যদিও
সভ্য সমাজ বস্ত্রকে প্রথমেই রাখতে চান । কারণ
প্রথম অবস্থানে থাকা খাদ্য ছাড়া মানুষ সাময়িকভাবে সমাজে চলাচল করতে পারলেও বস্ত্র ছাড়া এক মুহুর্ত কল্পনা
করা অসম্ভব।
মূলত লজ্জা নিবারন এবং আবহাওয়ার প্রতিকুলতা
থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্যই মানুষ আজীবন বস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। আদিকালে
গাছের লতা, পাতা, বাকল, পশুর চামড়া ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ তার লজ্জা
নিবারন করলেও পরবর্তীতে আঁশ , সুতা ও কাপড়ের ব্যবহার এখন পোশাক
তথা লজ্জা নিবারনের একমাত্র মাধ্যম। কবে
প্রথম কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা না সম্ভব হলেও অনেক আগে এক সময়
মানুষ সূতা দিয়ে হাতে সেলাই করে পোশাক তৈরী করত।
তবে সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক
তৈরীর ইতিহাস খুব বেশী দিনের নয়। আজ
থেকে মাত্র ২৬৩ বছর আগে সর্বপ্রথম সেলাই মেশিন ব্যবহার করা হয়। ১৭৫৫
সালে ইংল্যান্ডের চার্লস ফ্রেডরিক প্রথম সেলাই মেশিন আবিষ্কার ও প্যাটেন্ট করেন,
যেটা দ্বারা হ্যান্ড স্টিচের মত স্টিচ তৈরী করা যেত। বানিজ্যিকভাবে
সেলাই মেশিন তৈরী করা হয় ১৮৫১ ইং সালে অর্থাৎ আজ থেকে মাত্র ১৬৭ বছর আগে। যে কোম্পানী প্রথম এই সেলাই মেশিন তৈরী করেছিলেন তার নাম ইসাক মেরিট সিঙ্গার। তারপরে
জাপানের জুকি কোম্পানী ১৯৪৫ সালে টোকিওতে স্থাপন করা হয় এবং সেখানে প্রথম সেলাই মেশিন
তৈরী করা হয় ১৯৪৭ সাল থেকে।
চিত্রঃ এপ্যারেল সেকশন (গুগল)
রেডিমেইডঃ-
রেডিমেইড
পোশাক তৈরীর ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র
১৯৭ বছর আগে অর্থাৎ ১৮২১ সালে সর্বপ্রথম রেডিমেইড
পোশাক তৈরীর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। ১৮২৯
সালে ৮০টি সেলাই মেশিন নিয়ে পেরিসে বিশ্বের প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়
এবং এই ফ্যাক্টরিতে মিলিটারীদের ইউনিফর্ম তৈরী করা হোত। গ্রেট
ব্রিটেনের লিডস শহরে ১৮৫৬ সালে জন বেরেন তিনটি সেলাই মেশিন নিয়ে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
চালু করেন।
বাংলাদেশে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু
হয় উর্দূরোডে যার নাম রিয়াজ গার্মেন্টস । প্রাথমিকভাবে
রিয়াজ গার্মেন্টসে উৎপাদিত পোশাক স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হোত। ১৯৬৭
সালে রিয়াজ গার্মেন্টসের উৎপাদিত ১০০০০ পিস শার্ট বাংলাদেশ হতে সর্বপ্রথম বিদেশে
(ইংল্যান্ড) রপ্তানী করা হয়। গার্মেন্টস
প্রস্তুতকারক ও গার্মেন্টস রপ্তানীকারক দেশ হিসাবে প্রকৃতপক্ষে ১৯৮১-১৯৮২ সালে ০.১ বিলিয়ন রেডিইমেইড গার্মেন্টস রপ্তানী
করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পদচারনা আরম্ভ হয়। উক্ত
সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্টস শিল্পের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। অথচ
মাত্র ১০ বছর ব্যবধানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানীর পরিমাণ
(১৯৯১-১৯৯২) ৪৫
বিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয় এবং ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে ২৫০ বিলিয়ন টাকায়
উন্নীত হয়।
আর বর্তমান সমীক্ষা অনুসারে শুধুমাত্র ২০১৬
সালে টেক্সটাইল সেক্টর
২৮৬৬৮.২৯ মিলিয়ন টাকা উপার্জন করে।
এতক্ষন
আপনারা জানলেন পোশাক শিল্পের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ
অবদানের কথা।
এবার আমরা সরাসরি টেক্সটাইলের গার্মেন্টস সেকশন
নিয়ে আলোচনায় চলে যাব।
টেক্সটাইল সেক্টরে গার্মেন্টশ সেকশন এপার্যাল ম্যানুফেকচারিং নামে পরিচিত। প্রথমে
আমরা আলোচনা করব এপার্যাল ম্যানুফেকচারিং-এ ব্যবহৃত কিছু টার্ম এবং তাদের পরিচিতি নিয়ে।
১. এলাউন্সঃ-
শরীরের
মাপের সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত মাপ যোগ করে পোশাক তৈরী করা হয়, যা এলাউন্স নামে পরিচিত।
২. এপলিকঃ-
পোশাকের
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পোশাকের সম্মুখের দিকে কিছু অতিরিক্ত কাপড় সংযোজন করাকে
এপলিক বলা হয়।
৩.ব্যাক রাইজঃ-
ক্রাচ
হতে সেন্টার ব্যাক ওয়েস্ট লাইন পর্যন্ত দুরুত্বকে ব্যাক রাইজ বলে।
৪. ব্যাক টেকিং:-
সেলাই
আরম্ভ বা শেষ করার সময় সেলাই প্রান্ত বরাবর যাতে সেলাই সূতা সহজে খুলে যেতে না
পারে
সেজন্য
সেলাই আরম্ভ বা শেষ করার সময় আনুমানিক ১ সেঃমিঃ পিছনের দিকে সেলাই করে সেলাইয়ের
প্রান্তকে নিরাপদ করাকে ব্যাক টেকিং বলে।
৫.ব্যালেন্সঃ-
দেহের
সাথে সমন্বয় করে পোশাকের বিভিন্ন অংশের ভার, সেইপ ও বাহ্যিক সমন্বয়
বিশেষ করে সম্মুখ ও পিছন দিকের দৈর্ঘ্য সমন্বয়কে ব্যালেন্স বলে।
৬. বেসিক ব্লকঃ-
কোন
প্রকার এলাউন্স ছাড়া মানব শরীরের বিভিন্ন অংশের মাপ, পোশাক তৈরীর উদ্দেশ্যে গ্রহন
করে যে ব্লক বা ডিজাইন তৈরী করা হয় তাকে বেসিক ব্লক বলে।
৭.বারটেকঃ-
পোশাকের
কোন স্থানে খুবই ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যে একবার সেলাই এর উপর আরেকবার সেলাই করে স্থানটির
শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষমতাকে বারটেক বলে।
৮. বোতাম সাইজঃ-
বোতামের
ব্যাস বরাবর দুরুত্বকে বোতাম সাইজ বলে। যা সাধারনত লিং বা লাইন হিসাবে পরিচিত।
১ লিং = ০.৬৩৫ মিলিমিটার
৯.বোতাম স্ট্যান্ডঃ-
বোতামের কেন্দ্র থেকে কাপড়ের প্রান্ত পর্যন্ত দুরুত্বকে বোতাম
স্ট্যান্ড বলে। সাধারনত বোতাম স্ট্যান্ড
১ সেঃমিঃ এর কাছাকাছি হয়।
১০. বডাইসঃ-
মেয়েদের পোশাকের যে অংশটুকু গলা থেকে কোমর পর্যন্ত প্রসারিত ঐ
অংশকে বডাইস বলে।
References:
1. Introduction to Clothing Production Management
By A. J. Chuter
2. The Technology of Clothing Manufacture
By Harold Carr & Barbara Latham
3. Garments & Technology
By M. A. Kashem
*রিক্যাপ
কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
0 Comments