প্যাটার্নঃ-
একটি পোশাকের প্রত্যেকটি অংশের অবিকল প্রতিরুপ
কোন শক্ত কাগজে তৈরী করাকে প্যাটার্ন বলে। এক্ষেত্রে পোশাকের ভিন্ন
ভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা প্যাটার্ন তৈরী করা হয়। এই
সব প্যাটার্ন কাপড় কাটার পূর্বে , কাপড়ের উপরে আঠা
দিয়ে বা টেম্পোরারি সেলাই দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে
করে নিখুঁতভাবে প্যাটার্ন অনুসারে কাপড়টি কাটা যায়। এছাড়াও
পোশাকে যদি লাইনিং এবং বকরমের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও প্যাটার্ন তৈরী করা জরুরী।
চিত্রঃ- প্যাটার্ন (গুগল)
এই প্যাটার্ন তৈরী করার জন্য দক্ষ,
পরিমাপে পারদর্শী , কারিগরী জ্ঞানসম্পন্ন
ব্যাক্তি প্রয়োজন।
ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত প্যাটার্ন সাধারনত দুইটি পদ্ধতিতে
তৈরী করা হয় যা ব্লক প্যাটার্ন ও গার্মেন্টস প্যাটার্ন নামে পরিচিত। নিচে
এই দুই ধাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলঃ-
ব্লক প্যাটার্নঃ-
ব্লক
প্যাটার্ন বলতে মুল প্যাটার্নকে বুঝায় যাতে শরীরের সঠিক মাপ অনুসারে কাপড়ের বিভিন্ন
অংশের মাপ প্রস্তুত করা হয় এবং যেখানে ফ্যাশন বা ডেকোরেটিভ উদ্দেশ্যে কোন অতিরিক্ত
মাপ থাকে না।
এক কথায় বলতে গেলে যে প্যাটার্ন শুধুমাত্র তৈরীকৃত পোশাকের
মূল অংশগুলোর মাপ নিয়ে বানানো হয় তাকেই ব্লক প্যাটার্ন বলে। ব্লক
প্যাটার্ন পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের গড় মাপের
উপর ভিত্তি করে বানানো হয় অথবা বায়ারের নির্দেশিত পরামর্শ অনুসারে বানানো হয়।
একটি ব্লক প্যাটার্ন তৈরী করার জন্য নিম্নোক্ত
পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকঃ
১.ফ্ল্যাট মেথোডঃ-
পোশাকের বিভিন্ন অংশের প্যাটার্ন বিশেষ করে
স্লিভ,
বডি ইত্যাদির প্যাটার্ন টেকনিক্যাল ডিজাইনার দ্বারা তৈরী করা হয়ে
থাকে।
টেকনিক্যাল ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে শরীরের মাপ এবং আনুপাতিক
হারে শরীরের প্রত্যেকটা অংশের মাপ স্বয়ংক্রীয়ভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। এই
ধরনের প্যাটার্ন বর্তমানে সাধারনত কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের
হার্ড ডিস্কে আগে থেকে শরীরের সাথে শরীরের অন্যান্য অংশের অনুপাত প্রোগ্রামিং করে সংরক্ষন
করা থাকে।
এবং ইনপুট হিসাবে শরীরের মাপ দিলেই অন্যান্য অংশের মাপ
বের করে কম্পিউটার সেই অনুসারে প্যাটার্ন তৈরী করে এবং আউটপুট আকারে প্রদর্শন করে। এই
পদ্ধতিতে খুব দ্রুত প্যাটার্ন তৈরী করা সম্ভব হয়।
২.
মডেলিং :-
পোশাকে প্যাটার্ন তৈরীর এটিই প্রথম এবং সবচেয়ে প্রচলিত
মূল পদ্ধতি।
পোশাক শিল্পে এর ব্যবহার এখনও খুব বেশী পরিমানে হয়ে থাকে। এই
পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট মাপের একটি মূর্তি তৈরী করা হয় এবং সেই মূর্তির সাথে মানানসই ব্লক
তৈরী করা হয়।
একে টয়লি বলে। এরপর এই টয়লির মাপ অনুসারে
শক্ত কাপজে প্রত্যেকটা অংশের আলাদা আলাদ প্যাটার্ন তৈরী করা হয়। এই
পদ্ধতিতে প্যাটার্ন অত্যন্ত নিখুঁত হলেও প্যাটার্ন প্রস্তুত করতে সময় বেশী লাগে।
গার্মেন্টস
প্যাটার্নঃ-
ফ্ল্যাট পদ্ধতিতে বা মডেলিং পদ্ধতিতে তৈরীকৃত
প্যাটার্ন এর উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস প্যাটার্ন বা ওয়ার্কিং প্যাটার্ন তৈরী করা হয়। প্রতিটি
ব্লক প্যাটার্নকে বোর্ডের উপর রেখে পেন্সিলের সাহায্যে প্রতিলিপি তৈরী করা হয়। এরপর
এই ব্লক প্যাটার্নের প্রতিলিপির সাথে সুইং এলাউন্স, ট্রিমিং এলাউন্স, সেন্টার ফ্রন্ট লাইন,
সেন্টার ব্যাক লাইন, বোতাম ঘর, পোশাক কতটুকু ঢিলা হবে , বিশেষ নকশা ইত্যাদি সংযুক্ত
করা হয়ে থাকে।
প্যাটার্ন আঁকা শেষ হওয়ার পর প্রত্যেকটা অংশ আলাদাভাবে
কেটে নেওয়া হয়।
এবং এই গার্মেন্টস প্যাটার্ন বা ওয়ার্কিং প্যাটার্নের উপর
ভিত্তি করে স্যাম্পল পোশাক তৈরী করা হয়।
মার্কারঃ-
সাধারনত মার্কার বলতে এমন একটি শক্ত কাগজকে বুঝায় যার উপর পোশাক
তৈরীর সকল প্যাটার্ন যতটা কম সম্ভব স্থান দখল করে লাগানো থাকে, এতে করে অতিরিক্ত কাপড়ের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। মার্কারের
দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে এই বিষয়টি সাধারনত কয়েকটি ফ্যাক্টরের সাথে জড়িত। যথাঃ-
১.
স্প্রেডের একটি লে দ্বারা কতটি পোশাক তৈরী করা হবে।
২.
কাটিং টেবিলের দৈর্ঘ্য।
৩. প্রোডাকশন
প্ল্যানিং ইত্যাদি।
চিত্রঃ সিঙেল সাইজ মার্কার (গুগল)
মার্কার
ইফিসিয়েন্সিঃ-
মার্কার ইফিসিয়েন্সি তথা মার্কারের দক্ষতার
উপর প্রোডাকশনের লাভ বা ক্ষতি নির্ভর করে। কারন মার্কার ইফিসিয়েন্সি
বেশী হলে কাপড়ের অপচয় কম হবে আর এতে করে প্রোফিট বেশী হবে। মার্কার
ইফিসিয়েন্সি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর
খুব প্রবলভাবে নির্ভর করেঃ-
১.
মার্কার প্রস্তুতকারী
মার্কারের ইফিসিয়েন্সি সাধারনত মার্কার প্রস্তুতকারীর
কাজের দক্ষতা, প্রচেষ্টা, সততা, আন্তরিকতা , অভিজ্ঞতা
এবং কারিগরী জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।
২.
পোশাকের সাইজ
একটি প্যাটার্ন তৈরী করার সময় যত বেশী সংখ্যক
সাইজের প্যাটার্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয় সাধারনত মার্কার ইফিসিয়েন্সি তত
বেশী হয়।
৩.মার্কারে দৈর্ঘ্য
মার্কারের দৈর্ঘ্য যত বেশী হয় মার্কারের ইফিসিয়েন্সি
তত বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪.প্যাটার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং
প্যাটার্নের কোন কোন অংশের প্যাটার্ন ডিজাইন
পরিবর্তন করে কিংবা ক্ষুদ্র কোন অংশ প্যাটার্ন থেকে কেটে মার্কার ইফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি
করা যেতে পারে।
৫.কাপড়ের বৈশিষ্ঠ্য
যে সকল কাপড় সব দিক থেকে একই রকম দেখতে অর্থাৎ
সিমেট্রিক কাপড়ের ক্ষেত্রে মার্কার ইফিসিয়েন্সি বেশী পাওয়া যায়।
৬.
মার্কার তৈরীর পদ্ধতি
মার্কার তৈরীর দু’টি পদ্ধতি রয়েছে যথা ম্যানুয়াল এবং কম্পিউটারাইজড । দেখা
গেছে ম্যানুয়ালের তুলনায় কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে মার্কার ইফিসিয়েন্সি বেশী পাওয়া যায়।
৭.
মার্কারের প্রস্থ
মার্কারের প্রস্থ যত বেশী হয় মার্কার প্রস্তুতকারীর
পক্ষে মার্কারের পরিকল্পনা করা তত বেশী সহজ হয় এতে করে মার্কার ইফিসিয়েন্সি তত বেশী
পাওয়া যায়।
৮.
পোশাকের ধরন
যে সকল পোশাকে ছোট ছোট প্যাটার্নের সংখ্যা
বেশী সে সকল পোশাকের মার্কার তৈরী ক্ষেত্রে
মার্কারের ইফিসিয়েন্সি অপেক্ষাকৃত বেশী পাওয়া যায়।
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
References:
1. Introduction to Clothing Production Management
By A. J. Chuter
2. The Technology of Clothing Manufacture
By Harold Carr & Barbara
Latham
3. Garments & Technology
By M. A. Kashem
0 Comments