টেক্সটাইল
প্রিন্টিংকে
প্রধানত দুইভাগে করা যায়। যথাঃ-
১. প্রিন্টিং পদ্ধতি
২. প্রিন্টিং স্টাইল
প্রিন্টিং পদ্ধতিঃ-
প্রিন্টিং
এর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের মেশিনারীজ ব্যবহার করে থাকি।
বিভিন্ন ধরনের মেশিন দ্বারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রিন্টিং করা হয়।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে
বিভিন্ন
ধরনের সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
একজন প্রিন্টার নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রিন্টিং পদ্ধতি বেছে নিয়ে থাকেন।
সাধারনত
চার পদ্ধতিতে টেক্সটাইল প্রিন্টিং করা হয় । যথাঃ-
১.হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং
২.স্টেনশীল
প্রিন্টিং
৩.স্ক্রীন প্রিন্টিং
৪.মেশিন বা রোলার প্রিন্টিং
১.হ্যান্ড ব্লক
প্রিন্টিং:-
টেক্সটাইল
প্রিন্টিং এর এই পদ্ধতি অতি প্রাচীন কাল হতে চলে এসেছে। কিন্তু হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং এর ব্যবহার এখন ও এই উপমহাদেশে প্রচলিত রয়েছে।
হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং পদ্ধতিটি অত্যন্ত ধীর ।এই
পদ্ধতিতে এখন ও প্রিন্টিং করার কারণ হচ্ছে এই পদ্ধতিতে একজন প্রিন্টার ইচ্ছা অনুযায়ী যত খুশি রকমের রং ব্যবহার করতে পারেন এবং ফেব্রিকের দৈর্ঘ্য বা প্রস্থের দিকে ইচ্ছানুযায়ী ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারেন।
তাছাড়া যে কোন বিশাল আকৃতির ডিজাইন সহজেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব । উদাহরণ স্বরুপ, একটি পর্দার ফেব্রিকের বিরাট আকৃতির দেয়ার সমান গাছ এই পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা সম্ভব। কিন্তু একটি রোলার প্রিন্টিং মেশিনে তা সম্ভব না । কারণ
রোলার প্রিন্টিং মেশিনে একটি রোলারের প্রস্থ সীমিত থাকে।
তাছাড়া রোলার
প্রিন্টিং মেশিনে একটি ডিজাইন খোদাই করা থাকে যখন তখন পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং এ একজন প্রিন্টার মুহুর্তে ডিজাইন এবং কালার পরিবর্তন করতে পারে। শ্রমিকের সহজ ল্ভ্যতার কারনে হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং এর ব্যাপক প্রচলন এই উপমহাদেশে রয়েছে। ফলে সুন্দর সুন্দর হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টেড ফেব্রিক এই উপমহাদেশে প্রস্তুত হয়ে থাকে এবং বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।
হ্যান্ড ব্লক
প্রিন্টিং এর
জন্য ব্লক
প্রস্তুত করনঃ
বিছানা
চাদর, টেবিল ক্লথ, শাড়ী ইত্যাদি ছাপানোর জন্য ব্লক প্রিন্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং অন্যান্য প্রিন্টিং পদ্ধতির পাশাপাশি এই পদ্ধতি এখন ও কুটির শিল্প হিসাবে বেশ প্রচলিত।ব্লকগুলি ২”-৪”
ইঞ্চি পুরু ভাল কাঠের তৈরি হওয়া প্রয়োজন । তা না হলে অতি সহজেই ফেটে কিংবা বেকে যেতে পারে।
ডিজাইনের আকারের উপর ব্লকের আকার নির্ভর করলেও উহা সাধারনত ১২”-১৬”
ইঞ্চির বেশি লম্বা করা হয় না।
ডিজাইনের
যে অংশ ফেব্রিকের উপর ফুটিয়ে তুলতে হবে ,সে অংশে ব্লকের উপর উচু রেখে বাকি অংশ কেটে তুলে ফেলা হয়। ফলে এই অবস্থায় ব্লক যখন রং মিশ্রিত স্থানে ধীরে
ধীরে চাপ দিয়ে ফেব্রিকের উপর বসিয়ে জোড়ে পিটিয়ে উঠানো হয়, তখনই উহাতে বাঞ্চিত ডিজাইন ফুটে উঠে।প্রত্যেক রং এর জন্য পৃথক রং এর ডিজাইন ছাপানো যায়।
প্রত্যেক রং এর জন্য পৃথক পৃথক ব্লক থাকে । একই ফেব্রিকের একাধিক রং এর ডিজাইন ছাপানো যায়।
প্রত্যেক রং এর জন্য নির্দিষ্ট ব্লকের কাজ শেষ করার পর দ্বিতীয় ব্লকের কাজ শুরু করতে হয়।
ব্লক
প্রিন্টিং এর জন্য ভাল কাঠ, সিমেন্ট কিংবা পাথরের তৈরি খুব মজবুত ভারি টেবিল হলে সুবিধা হয়।লোহা বা স্টীলের টেবিল হলে ও চলতে পারে এবং আজকাল তা করা হয়ে থাকে । কয়েক
স্তর কম্বল দ্বারা এই টেবিলের উপরিভাগ ঢেকে দিয়ে উহার উপর পুনরায় একটি কোরা অথবা জলাভেদ্য প্লাষ্টিক জাতীয় ফেব্রিক দ্বারা আচ্ছাদন দিতে হয়।
এই ফেব্রিককে বেক গ্রে বলে। ছাপাবার ফেব্রিক এই টেবিলের উপর বেশ ভাল করে ছড়িয়ে নিচের ফেব্রিকের সাথে পিন কিংবা আটা যোগে আটকিয়ে দিতে হয়। এই সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ছাপাবার ফেব্রিক যেন সমানভাবে সমান টানে ছড়িয়ে থাকে,উহাতে যেন কোন ভাজের কারনে নড়াচড়া করতে না পারে।
প্রিন্টিং
পেষ্ট এর মিশ্রন এক টুকরা উলের কম্বলের উপর লাগানো থাকে। উহা হতে ব্লক যোগে রং ফেব্রিকের উপর আনা নেয়া হয়ে থাকে। এই উলের টুকরাকে বনাত বলে। এই মিশ্রন যে বাক্সে ছড়ান থাকে তাকে কালার ট্রে বলে । এই
কালার ট্রে যে বাক্সে থাকে ,তাকে সুইমিং টব বলে । এই টবের ৩/৪ ভাগ
খুব ঘন আঠা যোগে পূর্ণ থাকে । এই আঠার উপর কালার
ট্রে ভাসতে থাকে । এই
অবস্থায় ব্লক মিশ্রনের উপর আস্তে ২/৩ বার
লাগিয়ে ফেব্রিকের উপর বসিয়ে কয়েক বার হাতের মুঠা দ্বারা পিটিয়ে উঠালেই রং এর ছাপা লেগে যাবে। এইভাবে হ্যান্ড ব্লকের মাধ্যমে ফেব্রিক প্রিন্টিং করা হয় ।
২.স্টেনশীল প্রিন্টিং:-
এই
পদ্ধতিতে সাধারণত পাতলা মেটালসীট অথবা ওয়াটার প্রুফ কাগজ ব্যবহার করা হয়। স্প্রে অথবা ব্রাশের সাহায্যে ফেব্রিকে রং করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতি প্রথমে জাপানে শুরু হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে প্রিন্টিং করার সময় যেহেতু স্টেনশীলটি কোন রং বহন করে না , তাই ডিজাইন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের রং ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করা হয়।
৩.স্ক্রীন প্রিন্টিং:-
স্টেনশীল
প্রিন্টিং এর একটি উন্নততর পদ্ধতি হচ্ছে স্ক্রীন প্রিন্টিং । স্টেনশীল পদ্ধতিতে গোলাকার কিংবা লম্বা লাইন আকতে হলে সংযোগ ব্রীজ দরকার হয়। কিন্তু স্ক্রীন প্রিন্টিং এ তা অতি সহজে করা যায়।
স্ক্রীন প্রিন্টিং এ যে কোন ডিজাইন চুলের মত সুক্ষ্ম করা যায়। তা ছাড়া স্ক্রীন প্রিন্টিং এ প্রডাকশন রেট ব্লক প্রিন্টিং এর তুলনায় অনেক বেশি। পর্দা, টেবিল ক্লথ এবং মহিলাদের শাড়ী ইত্যাদি অতি সহজে এবং বহুল পরিমানে স্ক্রীন প্রিন্টিং পদ্ধতিতে প্রিন্ট করা হয়।
এই
পদ্ধতিতে প্রিন্টিং করার জন্য একটি কাঠের হ্যান্ডেলের মাথায় শক্ত রাবারের পাত লাগানো থাকে, যাকে স্কুইজি বলা হয়। এই স্কুইজির সাহায্যে স্কীনের মাধ্যমে ফেব্রিকে রং লাগানো হয়।
ভিন্ন ভিন্ন কালারের জন্য আলাদা স্ক্রীন ব্যবহার করা হয়-যেমন ব্লক প্রিন্টিং এর ক্ষেত্রে
আলাদা ব্লক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪.মেশিন বা
রোলার প্রিন্টিং
:-
বিভিন্ন
ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের মধ্যে ফ্ল্যাট প্রেস প্রিন্টিং মেশিন ও কপার রোলার প্রিন্টিং মেশিনই বেশি প্রচলিত রয়েছে। ফ্ল্যাট প্রেস প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে সাধারণত তিন কালারের প্রিন্ট করা যায়।এই মেশিন গুলোতে ডিজাইনগুলি কপার প্লেটে খোদায় করা থাকে । ফ্ল্যাট প্রেস প্রিন্টিং মেশিনে প্রিন্টিং
এর
স্ংযোগস্থল নিখুত হয় না এবং এই মেশিনে কাজ ও তাড়াতাড়ি হয় না।
মেশিন
প্রিন্টিং এর মধ্যে কপার রোলার সর্বোৎকৃষ্ট । কারণ রোলার প্রিন্টিং মেশিনে খুব তাড়াতাড়ি প্রিন্ট করা যায় এবং ব্লক গুলি ও সহজে নষ্ট হয় না। ডিজাইন গুলি কপার রোলারের মধ্যে খোদায় করা থাকে। মিল কারখানায় বিভিন্ন রকমের রোলার প্রিন্টিং মেশিন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।সাধারণত বড় একটি গোলাকার সিলিণ্ডারের চার পার্শ্বে রং এর পাত্র, খোদায় করা রোলার , ডক্টর নাইফ ইত্যাদি সিস্টেমেটিক ভাবে সাজানো থাকে। রং এর পাত্র হতে খোদায় করা কপার রোলারের গায়ে রং লাগে যা পরবর্তীতে উচ্চ চাপে ফেব্রিকের উপরে রোলারের খোদায় করা ডিজাইন অনুযায়ী ফুটে উঠে।
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
References:-
1.Textile Printing
By. Fred F. Jacobs
2.An Introduction to Textile Printing
By. W. Clarke
3. Textile Printing & Finishing
By. MOHD. SHAHJAHAN FEROZE
0 Comments