মার্সেরাইজিংঃ
যুক্তরাজ্যের
ব্লাক বার্ন এর কাছাকাছি গ্রেট হারউড এ জন্ম গ্রহনকারী জন মার্সার নামক এক ভদ্রলোক ১৮৪৪ সালে এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারে সারাবিশ্বে এর নামকরণ করা হয় মার্সেরাইজিং
। পরবর্তীতে ১৮৯৫ সালে এই পদ্ধতিটির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে টেক্সটাইল
ইন্ডাষ্ট্রিতে
ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে কটন
ইয়ার্ন বা ফেব্রিককে ঘন কষ্টিক সোডা দ্রবণে ক্রিয়া করানো হলে উহার লাসচার, টেনসাইল স্টেন্থ এবং এবসরবেন্সি
বৃদ্ধি পায়। ইহা একটি ফিজিও কেমিক্যাল পদ্ধতি। এ মার্সেরাইজিং
এর ফলে কটন ফাইবারের ভৌত ও রাসায়নিক গুনাবলির পরিবর্তন সাধিত হয়। এ পদ্ধতি সাধারণত কটন ইয়ার্ন ও ফেব্রিকের উপর ব্লিচড অবস্থায় প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিকে মূলত ফিনিশিং পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যদিও ইহা প্রিন্টিং এর পূর্বে করা হয়ে থাকে।
এ
পদ্ধতিতে
সাধারণত কটন
ইয়ার্ন বা ফেব্রিকে ৫৫ ডিগ্রি থেকে ৬৫ ডিগ্রি টোয়াডেল ঘনত্ব বিশিষ্ট কষ্টিক সোডা
দ্রবণে কক্ষ
তাপমাত্রায়
ক্রিয়া করানো হয় । টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসে মার্সেরাইজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । বিশেষ করে কটন ফেব্রিকের প্রিন্টিং মান বৃদ্ধির জন্য এ পদ্ধতিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।এ ছাড়া ব্লিচড ফিনিসড পন্যের জন্য মার্সেরাইজিং পদ্ধতিকে ফিনিসিং পদ্ধতি হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় ।
অতএব
, যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে কটন ইয়ার্ন বা ফেব্রিককে কক্ষ তাপমাত্রায় (১৮ ডিগ্রি সেঃ) ৫৫ ডিগ্রি থেকে ৬৫ ডিগ্রি টোয়াডেল ঘনত্ব বিশিষ্ট কস্টিক সোডা দ্বারা টেনশন সহযোগে ক্রিয়া করে ইয়ার্ন বা ফেব্রিকের চাকচিক্যতা তথা উজ্জ্বলতা , শক্তি, রং শোষন ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি করা হয় তাকে মার্সেরাইজিং বলা হয়।
মার্সেরাইজিং এর
উদ্দেশ্যঃ
নিম্নলিখিত
উদ্দেশ্য
সাধন করার জন্য কটন ইয়ার্ন বা ফেব্রিকে মার্সেরাইজিং করা হয়।
১.
চাকচিক্যতা
তথা উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা।
২.টেনজাইল
ট্রেন্থ বৃদ্ধি করা।
৩.
রং শোষন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৪।
ক্ষয় রোধ শক্তি বৃদ্ধি করা।
৫. লাইট
রেজিস্টেন্স শক্তি বৃদ্ধি করা।
৬.
অধিক আদ্রতা শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৭. কম
তাপমাত্রায়
কেমিক্যাল
রিএকটিভিটি
বৃদ্ধি করা।
৮. ফেব্রিকের
মসৃনতার উন্নয়ন সাধন করা।
মার্সেরাইজিং এর
প্রয়োজনীতাঃ
মার্সেরাইজিং
টেক্সটাইল
ওয়েট প্রসেসিং এ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কটন ইয়ার্ন ও ফেব্রিকের শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ স্ট্রেন্থ বৃদ্ধি পায়। কটন ফাইবারকে কস্টিক সোডা
দ্রবণে
ডুবালে ইহা ফুলে সিলিন্ডার আকার ধারন করে এবং ফাইবারের চ্যাপ্টা আকার অনেকটা গোলাকার হয়। এছাড়া ফাইবারের লুমেন সংকীর্ণ হয়ে উহার কোষ প্রাচীরের পুরুত্ব বৃদ্ধি পায় ফলে স্ট্রেন্থ বৃদ্ধি পায় ।
এই
ক্রিয়ায় ফাইবার তথা ইয়ার্ন সারফেস
অধিক
মসৃন হয়
বলে প্রতিফলিত আলো অধিক সমভাবে বিচ্ছুরিত হয় ফলে ইয়ার্ন বা ফেব্রিকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এই ক্রিয়ার ফলে ফাইবারের সকল উপাদানই ফুলে
যায় ফলে উহার শোষন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এই জন্য মার্সেরাইজ করা ফেব্রিক ডাইং বা প্রিন্টিং করা হলে উহার ডাইং বা প্রিন্টিং সমভাবে হয় এবং ফেব্রিকের হ্যান্ড ফিল বৃদ্ধি পায়। মার্সেরাইজিং এর ফলে ইয়ার্ন ফুলে যায় বলে ফেব্রিকের ওয়েব
ঘন
হয়।
সাধারণত মোটামুটি কম টুইষ্ট এর ইয়ার্ন মার্সেরাইজিং এর জন্য উপযোগী। অধিক টুইষ্ট এর ইয়ার্নে মার্সেরাইজিং ভাল হয় না । কারণ এতে কস্টিক সোডা ভালভাবে ফাইবারে প্রবেশ করতে পারে না । কম্বেড ইয়ার্ন দ্বারা তৈরি ফেব্রিক মার্সেরাইজিং এর জন্য বেশি উপযোগী । মার্সেরাইজিং করা ফেব্রিক গুনগত মান ও উৎকর্ষতার শীর্ষে অবস্থান করে । সুতরাং আমরা বলতে পারি যে কটন ফেব্রিকের বিভিন্ন গুনাগুন ও ব্যবহারের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য মার্সেরাইজিং প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম ।
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
0 Comments