বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের ভবিষ্যৎ
লক ডাউনের কারণে মানুষের জামা কাপড়ের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে। লাস্ট দেড় মাস মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। পুরুষ মানুষ লুঙ্গি গেঞ্জি পরে দিন কাটাচ্ছে। অন্যান্য কাপড়ের উপর চাপ নেই।
সেইম অবস্থা সারা দুনিয়ায়। যারা আমাদের দেশ থেকে কাপড় কিনে মানে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো তাদের অবস্থাও সেইম। অর্থাৎ লাস্ট ২/২.৫ মাস ইউরোপ আমেরিকার কেউ কাপড় কিনে নাই। অর্থাৎ ১ বছরে কারো যদি ১২ টা জামা কাপড় লাগত তার মধ্যে তিনি ২ টা কিনেন নাই। এই অবস্থা যদি আরো ১ মাস যায় তাহলে তিনি বছরে ৩ টা কাপড় কম কিনবেন। ৪ মাস গেলে ৪ টা কাপড় কম কিনবেন।
যদি একজন মানুষ ১২ টা কাপড়ের জায়গায় ৮ টা কাপড় কিনে তাহলে কাপড়ের চাহিদা ৩৩% কমে যাবে। এটা স্বাভাবিক হিসাবে। এরপর আসেন 'অতি স্বাভাবিক' হিসাবে!!
সেটা হলো করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের হাতে টাকা কম থাকবে। তাহলে তিনি বছরের বাকী যে ৮ মাসে ৮ টা জামা কিনতেন তা টাকার জন্য কিনতে পারবেন না। তিনি হয়তো ৬ টা জামা কিনবেন। অর্থাৎ একজন লোক লক ডাউন ও আর্থিক কারণে ১ বছরে ১২টা জামার স্থলে ৬ টা জামা কিনবেন। সুতরাং 'অতি স্বাভাবিক' হিসেবে তিনি গত বছরের চেয়ে ৫০% জামা কাপড় কম কিনবেন।
আর অর্থনৈতিক যে ঝড় মানুষের উপর গিয়েছে তা সামলাতে সামলাতে মানুষের মিনিমাম ২ বছর লাগবে। আর এই ২ বছরে মানুষ জামা কাপড় আগের মত কিনবে না। অবশ্যই কম কম করে কিনবে। তাহলে সেখানেও যদি ধরে নেই ১ জন মানুষ বছরে ১২ টা কাপড় কেনার স্থলে ৮ টা কাপড় দিয়ে কাজ চালাবেন তাহলে সারা বিশ্বে কাপড়ের চাহিদা ৩০% থেকে ৩৬% কমে যাবে।
এখন যদি কাপড়ের চাহিদা ৩৬% কমে যায় তাহলে কোন সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
উত্তরে সবার আগে চলে আসে -গার্মেন্টস সেক্টর (যারা কাপড় কাটে আর সেলাই করে)। এই গার্মেন্টস সেক্টরের সাথে জড়িত আছে টেক্সটাইল সেক্টর (যারা সূতা কাপড় রং ইত্যাদি বানায়)। এর সাথে জড়িত আছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সেক্টর। যারা বোতাম জিপার রাবার ব্যাজ রং এম্ব্রয়ডারি প্রিন্টিং ইত্যাদি কাজ করে।
আর উপরে বর্ণিত শিল্প গুলো কোন কোন দেশে অবস্থিত?
যে দেশেই অবস্থিত হোক না কেন আপনার এখন বাংলাদেশের নাম মনে পড়ছে। কারণ বাংলাদেশের ৭৬% রপ্তানি আয় গার্মেন্টস শিল্প থেকে আসে। স্বাভাবিক হিসাবে যদি পৃথিবীর জামা কাপড়ের চাহিদা আগামী বছরেই ৩৬% কমে যায় তাহলে তার সরাসরি ইফেক্ট আমাদের দেশে পড়বে অর্থাৎ খাড়ার উপর ৩৬% ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। এবার আসি অস্বাভাবিক হিসাবে। গার্মেন্টস শিল্প নির্ভর কোন দেশ যদি তাদের শিল্পকে রক্ষার জন্য স্পেশাল কোন কর্মসূচি নেয় তাহলে ভালো পরিমানে অর্ডার ঐদেশে চলে আসবে। মনে করি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কম্পিটিটর ভিয়েতনামের অর্ডার কমে গেল ৩৬% আর বাংলাদেশের অর্ডার কমে গেল ৩৬% এখন যদি ভিয়েতনাম সরকার এমন কোন স্টেপ নেয় যাতে পোষাক ক্রেতারা সেই স্টেপ দেখে ভিয়েতনামে পাড়ি জমায় তাহলে বাংলাদেশ থেকে আরো ৩৬% অর্ডার ভিয়েতনামের দিকে চলে যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য অর্ডার থাকবে মাত্র ২৮% আর ভিয়েতনামে অর্ডার থাকবে ১০০%
এখন কী হতে পারে সেই স্টেপ যাতে এই মন্দায় ক্রেতারা এক দেশ ছেড়ে আরেক দেশে যাবে"
সেটা অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন সরকারের পক্ষ থেকে শিপিং ফ্রী করে দেয়া যেতে পারে। বাকীতে পণ্য বিক্রির সুযোগ দেয়া যেতে পারে। অথবা অন্য যেকোন স্টেপ যাতে ক্রেতারা অন্য দেশ বাদ দিয়ে এদিকে আসে। কিন্তু এভাবে বেশিদিন টেকা যাবে না কারণ আল্টিমেট ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে দিন দিন ভালো করছে। পর পর দুই বছর তারা পোষাক রপ্তানিতে ২য় স্থান অর্জন করেছে যার দীর্ঘদিন বাংলাদেশের দখলে ছিল।
তাহলে কী উপায়? এই যে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এই সেক্টরে কাজ করছে তাদের কী হবে?
এই যে হাজারো মিল কারখানা এগুলোর কী হবে?
স্বাভাবিক হিসেবেই এগুলো একদিন বন্ধ হয়ে যাবে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। একটা দেশে একটা নির্দিষ্ট শিল্প একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে। এর আগে এই দেশে ছিল পাট শিল্প, পরে এসেছে পোষাক শিল্প। এখন থেকেই পোষাক শিল্পের বিকল্প কী শিল্প আছে তা খুজে বের করতে হবে।
এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হলো কৃষি শিল্প। এটা নিয়ে পরে পোস্ট দিব।
লিখেছেনঃ-
ফখরুল ইসলাম
সাজগোজ
ম্যানেজিং ডিরেক্টর
*রিক্যাপ কর্তৃক সংগৃহীত
0 Comments