Ticker

6/recent/ticker-posts

"একটি হার না মানার গল্প"

"একটি_সফল_টিমওয়ার্কের_গল্প কিংবা বলা যায় হার না মানার গল্প"

২০১৮ সালে যখন আমি বুটেক্স কর্তৃক প্রণীত নতুন সিলেবাসে গার্মেন্টস ক্যাড ও উইভিং ক্যাড এই দুটো ব্যবহারিক সাবজেক্ট দেখি,তখন থেকেই চিন্তায় পড়ে গেলাম,কিভাবে এই বিষয়গুলো স্টুডেন্টদের পড়াবো।কারণ আমাদের কম্পিউটার ল্যাবের অবস্থা তখন খুবই করুন।আর সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ছিল আমাদের কাছে কোন সফটওয়্যার ই ছিল না।তখন আমি তৎকালীন অধ্যক্ষ ইসমাইল মোল্লা স্যারকে জানাই এবং একটি এপ্লিকেশন ও দেই,এ ব্যাপারে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।পাশাপাশি বস্ত্র অধিদপ্তরের তৎকালীন সহকারী পরিচালক রাজীব ভাই এর সাথেও পরামর্শ করি,কিভাবে এই সফটওয়্যার গুলো দ্রুত কেনা যায়।তিনি বললেন প্রিন্সিপাল স্যারকে ডিজি স্যার বরাবর একটি আবেদন দিতে। স্যারকে জানালাম।খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম কারণ কয়েক সেমিস্টার পরেই ১১তম ব্যাচের এই কোর্সগুলো পাঠদান করতে হবে।আর সফটওয়্যার ছাড়া ২টা ল্যাব সম্পূর্ণভাবে এবং এপ্লিকেশন অব কম্পিউটার ইন এপারেল ও এপ্লিকেশন অব কম্পিউটার ইন ফ্যাব্রিকের ৬০% ই নেয়া সম্ভব হবে না।আর সরকারী প্রকিউরমেন্ট পদ্ধতি বেশ সময় সাপেক্ষ তাই প্রোএক্টিভলি এই ব্যাপারে কাজ করছিলাম।অন্যান্য কলেজগুলোর শিক্ষকদের সাথেও কথা বললাম,তাদেরকে অবহিত করলাম আপনারাও আবেদন করেন।অধিদপ্তরকে জানান।আমি মন্ত্রণালয়ের মিটিং এ এই ব্যাপারগুলো স্যারদের সদয় দৃষ্টির জন্য উত্থাপনও করলাম।কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছিলাম।
Garment CAD software টি আমাদের অধিকাংশ কলেজেই রয়েছে যদিও আমাদের ছিল না কিন্তু Weaving CAD সফটওয়্যারটি কোথাও ছিল না।তাই সেটাই চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।আর এই সফটওয়্যারটির প্রাইস এত বেশি যে সেটা কলেজের পক্ষে কেনা সম্ভব না।(বাজেট ও আর্থিক ক্ষমতা দুটোর কোনটাই কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই)ঐ বাজেটের কিছু কিনতে হলে বেশ বড় বাজেটের দরকার,যেটা পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব সেটা দ্রুতই বুঝে গেলাম।কিন্তু মন খুব খারাপ লাগছিল,এটা ভেবে যে একটা বিষয়ে তাহলে স্টুডেন্টরা অজ্ঞ রয়ে যাবে আমাদের কারণে।এর পরে ২০১৯ সালে করোনার থাবায় চলে গেল অনেক দিন।




করোনার পরঃ
একদিন আমার ক্লোদিং ল্যাবের এক কোনায় দেখলাম একটি ডেস্কটপ পড়ে আছে।এটার বিষয়ে কেউ কিছু জানে না।কেউ এটাতে হাতও দেয় না।ল্যাবের ইন্সট্রাক্টরকে জিজ্ঞাসা করলাম।উনি জানালো এটা আমাদের না,এটা উইভিং ল্যাব এর।এখানে একটি সফটওয়্যার ইন্সটল করে দিয়েছিল অনেক আগে(সম্ভবত ২০০৯-১০),কিন্তু কখনোই ব্যবহার হয় নি।প্রকৃতপক্ষে তখন এই সফটওয়্যারটি বুঝে নেয়ার মত সক্ষম জনবলই ছিল না।যাই হোক আমি জানতে পারলাম এর সাথে একটা ডোংগল আছে।আমার বুঝতে বাকি রইল না যে এটা উইভিং ক্যাড সফটওয়্যার। আমি সব কিছু বের করালাম,কম্পিউটার অন করে দেখলাম সফটওয়্যারটি এক্সপায়ার্ড।লাইসেন্স আর কাজ করছে না।তারপর ঐ সফটওয়্যার এর ক্রয়ের কাগজপত্র খুজে জানতে পারি এটা কোন কোম্পানির।কিন্তু কোন কনটাক্ট এড্রেস বা নাম্বার নেই।পরে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মত গুগলে সার্চ দেই,বাংলাদেশে কোন এজেন্ট আছে কিনা।ভাগ্যগুণে একটি মোবাইল নাম্বার পাই।সেখান থেকেই শুরু।
ফোন দিলাম,উনি সম্ভবত ঐ কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন।ওনার কাছে সহযোগিতা চাই,ওনাকে বিভিন্নভাবে কনভিন্স করি যেন উনি আমাদের সহযোগিতা করেন।পরবর্তীতে উনি ওনার টেকনিক্যাল টিম এর নাম্বার দেন। ওনাদের সাথে আমি আমাদের ফ্যাব্রিক ডিপার্টমেন্ট এর প্রভাষক সাইফুল ইসলামকে ট্যাগ করে দেই।তারপর তারা টিম ভিউয়ার এর মাধ্যমে বেশ ভালোভাবে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।পরে তারা তাদের ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল টিমের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় এবং ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়াররা এ ব্যাপারে কাজ করে।আমাদের মৃত সফটওয়্যারটিকে পুনরজ্জীবিত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতেই হয়।পরবর্তীতে তারাও ব্যর্থ হয়ে, সাজেস্ট করে একটি নতুন পিসিতে ইন্সটল করার জন্য,করলাম।তাও কাজ হচ্ছে না।এরপর তারা ঐ ডংগলগুলো নিয়ে তাদের ঢাকাস্থ অফিসে যোগাযোগ করতে বলে।বর্তমান অধ্যক্ষ রোকন স্যারকে জানালে স্যার দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং সাইফুল স্যারকে ঢাকায় পাঠায়,সেই ডংগল গুলোকে ইন্ডিয়াতে পাঠানো হয়, এবং আমাদেরকে পরবর্তীতে নতুন ডংগল দেয়া হয়।নতুন ডংগল এর ছোয়া পেয়ে মৃত সফটওয়্যার অবশেষে পুনরায় সচল হয়ে উঠল।আলহামদুলিল্লাহ। পুরো কাজটিতে আমাদের টানা ১মাস ইফোর্ট দেয়া লেগেছে।জনাব সাইফুল ইসলাম কে ধন্যবাদ দিতেই হয়, নিরলসভাবে এটার পেছনে লেগে থাকার জন্য।আর রোকন স্যার বরাবরের মতও এ ব্যাপারেও কন্টিনিউয়াস খোজ খবর নিতেন।উৎসাহ দিতেন।
যেই দিন সাইফুল স্যার আমাকে বলল যে স্যার সফটওয়্যার ইজ অন।আমি এতটা খুশিটা হয়েছিলাম যে বলার মত না।আমি সাথে সাথে বললাম ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারকে বলেন এবার ট্রেইনিং দিতে।ইন্ডিয়ান ভদ্রলোক ও সময় দিলেন জুমে,আমি আর সাইফুল দুইজন ই সেই ট্রেইনিং এ অংশ নিলাম।সেদিন আমার আরো ২টা মিটিং ছিল,কিন্তু আমি এটাকেই টপ প্রায়োরিটি দিয়ে ট্রেইনিং এ অংশ নেই আর সাইফুল স্যারকে বললাম আপনি ফ্যাব্রিকের শিক্ষক আপনি খুব ভালোভাবে বুঝে নেন,আপনাকেই এই ল্যাব নিতে হবে।আলহামদুলিল্লাহ,অত্যন্ত সুন্দরভাবে ট্রেইনিং সম্পন্ন করে এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে স্টুডেন্টদের উইভিং ডিজাইন শিখানো সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য যে এই সফটওয়্যারটির মূল্য ১৫লাখ টাকা।যেটা আমাদের কলেজের জন্য ক্রয় করা সম্ভব ছিল না।,আর কখনো হতও কিনা জানি না।তাই কলেজ বা দেশের ১৫ লক্ষ টাকা সাশ্রয় এ যেমন আনন্দ পেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি তুষ্ট হয়েছি এই ভেবে যে ছাত্র-ছাত্রীদের এই কোর্সটি না পড়ে যেতে হবে না।ওরা বলতে পারবে,আমরা জানি কিভাবে সফটওয়্যারে উইভিং ডিজাইন করতে হয়,আমাদেরকে কলেজে শিখিয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ।এটাই আমাদের প্রাপ্তি।
Maniruzzaman Chowdhury
Assistant Professor
Textile Engineering College, Zorargonj, Chittagong

সংগ্রাহকঃ- Mamun Rezwan 

Post a Comment

0 Comments