প্রথমবারের মতো টেম্পল ইউনিভার্সিটিতে গেলাম। চমৎকার ক্যাম্পাস। নতুন সেশন শুরু হয়েছে। পুরু ক্যাম্পাস জুড়ে স্টুডেন্টদের আনাগোনা। এদেশের স্টুডেন্টদের মতো ভাগ্যবান জগতে কেউ নেই। যে যার মতো বসে আছে। খাচ্ছে। গল্প করছে। কে কি পোশাক পড়লো, কে কোথায় বসলো, কে কোথায় ঘাসের উপর শুয়ে রইলো—কেউ কেয়ার করে না। কেউ কাউকে বিরক্ত করবে না। কোন নেতা নেই। বড় ভাই নেই। কাউকে দেখলে দাঁড়াতে হয় না। পেছনে হাত গুটিয়ে জ্বি ভাইয়া, জ্বি স্যার করতে হয় না।
১২০ কিলোমিটার রাস্তা ড্রাইভ করে গিয়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছতে সকাল সোয়া নয়টা বেজে যায়। গাড়ি পার্ক করে সরাসরি চলে যাই প্রফেসর কিমের অফিসে। খুবই তরুণ প্রফেসর। দুই বছর হলো সে টেম্পলে জয়েন করেছে। মেধায় অনেক ধারালো। প্রিন্সটনের নোবেল বিজয়ী সাইন্টিস্ট ডেভিড ম্যাকমিলানের ল্যাবে কাজ করেছে সে।
প্রফেসর কিম সেমিনার রুমে নিয়ে গেলেন। ল্যাপটপ সেট করে সকাল দশটায় লেকচার দিলাম। এগারোটা থেকে কেন্ডিডেইটদের ইন্টারভিউ শুরু করি।
আমেরিকার কেন্ডিডেইটদের দেখলে আমার কিছুটা হিংসা হয়। কোম্পানিগুলো বিভিন্ন স্কুলে যায়। সেখানে গিয়ে প্রেজেন্টেশন দেয়। কোম্পানি সম্পর্কে কেন্ডিডেইটদেরকে জানায়। ওদেরকে নাস্তা দেয়। লাঞ্চ দেয়। কেন্ডিদেইটের কতো যত্ন করে ইন্টারভিউ নেয়। কেন্ডিডেইটরা বুঝতেই পারে না যে তারা ইন্টারভিউ দিচ্ছে। ক্যান্ডিডেইটদেরও অনেক প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। এটাই কালচার।
ক্যান্ডিডেইটরা ছাড়াও কিছু গ্রেজুয়েট স্টুডেন্ট আসে গল্প করতে। তারা হয়তো পিএইচডি’র সেকেন্ড ইয়ার বা থার্ড ইয়ারে আছে। তারা আসে কোম্পানি সম্পর্কে জানতে। নেটওয়ার্ক বিল্ড করতে। ফ্রি লাঞ্চ খেতে। ফ্রি ফুডের প্রতি দুনিয়ার সবারই একটা আগ্রহ থাকে।
প্রফেসর কিমের একটা স্টুডেন্টের নাম রিফাত। অনেকক্ষণ ধরে ছেলেটা আমাদের সাথে ছিলো। একটু চুপচাপ স্বভাবের। হঠাৎ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি কিনা! যেই বললাম আমি বাংলাদেশি, তখনই তার মুখে ভিন্ন একটা আভা দেখতে পেলাম। সে বললো, তার মা-বাবা বাংলাদেশি। তার জন্ম হয়েছে আমেরিকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট টেম্পলে পিএইচডি করছে। তার নাম শাওন। সে এসেছে দেখা করতে। সে না আসলেও পারতো। কিন্তু এসেছে। দূরদেশে নিজের দেশের মানুষ দেখলে সবারই একটা ভালো লাগে। এটা ভিন্ন অনুভূতি।
এই যে বাংলাদেশের ব্রিলিয়ান্ট ছেলে-মেয়েরা সারা দুনিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে—এটা দেখলেই আলাদা একটা শান্তি পাই।
0 Comments