Ticker

6/recent/ticker-posts

কর্পোরেট_ফ্যাক্ট_১৭

 গার্মেন্টস বা টেক্সটাইলে আপনার পরিচিত কাউকে যদি জিজ্ঞাস করেন , "ভাই সেক্টরটা কেমন?" ৯০% (আমার অনুমান ভুল হতে পারে) উত্তর পাবেন, "ভাই এরচেয়ে খারাপ জায়গা কোন সেক্টরে থাকতে পারেনা। সুযোগ থাকলে এই সেক্টর থেকে দূরে থাকুন।" আমার এই আনুমানিক জরিপের সাথে আপনিও আশা করি একমত হবেন। কিন্তু কেন? এর উত্তরটা কি আমরা জানি? চলুন আজকে উত্তরটা জানার চেষ্টা করি।

সুখ আসলে কিসে/কোথায়?
ব্যাক্তিগত জীবনে বা পেশাগত জীবনে আমরা অসুখী। কিন্তু কেন ভেবে দেখেছি কি? কিংবা আসলেই আমরা সুখের সংজ্ঞা যেটা জানি সেটা কি আদৌ প্রকৃত সুখের সংজ্ঞা? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের উত্তর আপনি পাবেন ইন-শা-আল্লাহ।
একটা উদাহরণে যাওয়া যাক। যারা আমার এই সিরিজটা পড়েছেন তারা দেখেছেন আমি বাস্তবিক উদাহরণের সাহায্যে যেকোন বিষয় নিয়ে লেখতে পছন্দ করি।




ধরা যাক, আপনি সুইং প্রোডাকশনে আইই ডিপার্ট্মেন্টে আছেন। আপনি আপনার এলাকার সমবয়সী বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করেছেন। অন্যান্যরা কেউ ইইই, কেউ সিভিল, কেউ সিএসই ইত্যাদি। প্রথম অসুখী হওয়ার অনুভূতি আপনার তৈরি হয়েছে কখন জানেন? যখন আপনার বন্ধুরা চাকরী খোঁজার জন্য তোড়জোড় করছে, ৩০-৪০ হাজার না হলে কোথাও জয়েন করবেনা ডিসিশন নিয়েছে কিন্তু আপনি কোর্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে হুট করে ১৮ হাজার টাকা স্যালারিতে MTO পদে জয়েন করে ফেলেছেন। তখন আপনার কোন এক বন্ধু আপনার সাথে গল্প করছে," আরে ২৫ হাজারের একটা অফার পাইছিলাম কিন্তু ৩৫ বা ৪০ এর কমে আমি ঢুকবই না তাই জয়েন করলাম না।" তখন আপনি প্রথম ধাক্কাটা খেলেন ভাবলেন, " মেধার দিক দিয়ে আমি এগিয়ে ছিলাম সকুল কলেজে, বিএসসিও শেষ করেছি খুব ভাল সিজি নিয়ে কিন্তু আমি মাত্র ১৮তে চাকরী করছি আর ও?" এইযে আপনি অসুখী হয়ে পড়লেন। এবার দ্বিতীয়বার কখন ধাক্কাটা খাবেন বলি। যখন দেখবেন আপনার বন্ধুটি ৩০হাজার বা ৪০ হাজারে জয়েন করে পার্টি দিচ্ছে এবং আপনাকে ইনভাইট করছে। এবং সর্বশেষে আপনার ওয়ার্কিং ইনভাইরোনমেন্ট নিয়ে আপনার হতাশা তৈরি হবে। কারণ আপনার বন্ধুটি সপ্তাহে পাঁচদিন ৯টা-৫টা এসি রুমে বসে অফিস করছে আর আপনাকে বাজে একটা পরিবেশে সপ্তাহে ছয়দিন বা তারচেয়ে বেশী ১৪-১৫ ঘণ্টা অফিসে থাকতে হচ্ছে। তখন নিজের সেক্টরের উপর এক রাশ হতাশা এবং ঘৃণা তৈরি হবে। এই ঘৃণা থেকে আপনি নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা শুরু করবেন। কেউ এরকম হতাশা নিয়ে সুখী হতে পারে? পারেনা।
এখন চলুন কারন খুঁজে বের করি এই অসুখী জীবনের।

আবার উদাহরণে যাওয়া যাক।
আপনি এমন একটা এলাকা থেকে উঠে এসেছেন সেখানে আপনার সমবয়সীদের অধিকাংশই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়নি। কোন রকমে সেলসম্যানের চাকরী করে, বা হোটেল বয়ের কাজ করে বা টুকটাক করে কোনভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হয়ত কেউ মাস শেষে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বা কিছুটা বেশী বা কিছুটা কম বেতন পাচ্ছে। কাজেরও নিশ্চয়তা নেই। তখন যদি তাদের দিকে তাকান দেখবেন আপনার হতাশা আপনাকে আর ধরতে পারবেনা। তখন ভাববেন, "মাস শেষে আপনি অন টাইমে স্যালারিটা পাচ্ছেন, ছয়মাস বা এক বছর পরপর আপনার বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোটামুটি একটা স্ট্যাবল কোম্পানিতে আছেন। আপনি জানেন এই সেক্টরে লেগে থাকতে পারলে একটা সময় টাকার অভাব থাকবেনা ইন-শা-আল্লাহ। " তাদের দিকে তাকালে দেখবেন আপনাকে সুখী মনে হচ্ছে। তখন আর হতাশা আপনাকে গ্রাস করতে পারবেনা।

এক্ষেত্রে একটা প্লাস পয়েন্ট আছে। আপনার রিজিক্বের ব্যবস্থা আপনার আল্লাহই করে রেখছেন।
"আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।" [১]
দুনিয়াবি সম্পত্তির ব্যাপারে আল্লাহ সব সময় আপনার থেকে যারা নিচের অবস্থানে আছে তাদের দিকে তাকাতে বলেছেন। আর দ্বীনি বিষয়ে সব সময় আপনার চেয়ে যারা উপরের অবস্থানে আছে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে শিখিয়েছেন। যখন আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন যে, আপনার রিজিক্বের ব্যবস্থা আল্লাহ আপনাকে এই টেক্সটাইলের মাধ্যমেই করেছেন এবং একইসাথে ১০০% নিশ্চিত যে, আল্লাহ আপনার রিজ্বিক্কের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছেন তখন হতাশা কোথায় চলে যাবে? আল্লাহ পরীক্ষার জন্য হয়তো আপনাকে রিজ্বিকের পরীক্ষায় ফেলতে পারেন। এই পরীক্ষায় পাশ করলে এটার পুরুষ্কার আরও শতগুণ উত্তম।
[১] আল কোর'আন ১১ঃ০৬

*লেখক স্বত্ত্বঃ- Mamun Rezwan
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত

Post a Comment

0 Comments