Ticker

6/recent/ticker-posts

ক্ষনিকের_ডায়েরী_০১

 আমাদের হলটা চারতালা। আর আমার রুম নম্বর ৪০৪। একদিন হলের সামনে থেকে চারতালার আমার একটা ফ্রেন্ডকে ডেকে জিজ্ঞাস করলাম তার কাছে কোর'আন মাজীদ আছে কি না? সে আছে বলায় তাকে বললাম আমাকে দেওয়ার জন্য। এই কথা দুই তালার কোন একজন শুনতে পেয়ে জিজ্ঞাস করল কোর'আন দিয়ে কি করবি? প্রশ্নটা শুনে সত্যিই আমি অবাক হয়েছি। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে একজন মুসলমান জানে না কোর'আন মাজীদ কি করতে হয়?

এই না জানার দায়ভারটা কার ? ছেলেটার নাকি তার পরিবারের? সে হয়তো তার বাড়িতে কোর'আন মাজীদকে সব সময় কাপড় দিয়ে আলমারির উপর মুড়িয়ে রাখতে দেখেছে। সে ছোটবেলায় হয়তো তার পরিবারের কাউকে কোর'আন পড়তে দেখে নি।

মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আমার সকালটা শুরু হত আব্বুর ডাকে ফযরের সময়। আব্বুর হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে মসজিদে যেতাম। কি শীত কি গরম সব সময় এই রুটিন চলত। বাসায় ফিরে আব্বুর কন্ঠে কোর'আন তেলাওয়াত শুনতাম। মুগ্ধ হয়ে চিন্তা করতাম কন্ঠে এত মায়া থাকে কি করে? মাকে দেখতাম এশার নামাযের পর কোর'আন পড়তে। পাশে বসে থাকতাম মায়ের আর মা একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকত, অন্য হাত দিয়ে কোর'আন পড়ত।




অনেকদিন পর সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। যাই হোক দীর্ঘ দিনের মরচে পড়া অভ্যাস আবার শুরু করতে একটু কষ্ট হয় বৈকি। টানা প্রায় দেড় মাস পরীক্ষা, বাড়ি যাওয়া এরকম নানান ব্যস্ততায় পুরনো একটা অভ্যাস প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছিল। অবশেষে আলহামদুলিল্লাহ আজকে আবার শুরু করলাম। কোটি টাকা দামের অভ্যাস, প্রচুর মুনাফা এই কাজে। শুনবেন?

হুম আগে প্রতি শুক্রবার জুম্মা'আর পর সূরা কা'হাফ পড়ার অভ্যাস ছিল আমার। উপরোক্ত কিছু ব্যস্ততার কারনে বেশ কয়েক সপ্তাহ পড়া হয়ে ওঠে নি। আলহামদুলিল্লাহ আজকে আবার পড়ার সুযোগ করে দিলেন আল্লাহ। সূরাটা পড়ে আল্লাহর নাম নিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম আর আল্লাহর রহমতে খুব ভাল ঘুমও হল। ঘুম থেকে উঠে দেখি মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। নামায পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

টিউশনির উদ্দেশ্যে হাঁটছি আর মা বাবার কথা মনে পড়ছে। মা দো'আ কর আমার জন্য। আর কিছু করতে পারি বা না পারি ঈমানটা যেন ঠিক থাকে এই দুনিয়ায়। নিজের পরিচয় যেন বুক উঁচিয়ে বলতে পারি আমি মুসলমান।
অন্যায়কে কবর দিতে, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেই আমার জন্ম।


*লেখক স্বত্ত্বঃ- Mamun Rezwan
*২৮/১০/১৬ ইং

Post a Comment

1 Comments