দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ঠিক রেখে ফেব্রিককে মার্কার এবং প্যাটার্ন অনুসারে গার্মেন্টসের অংশগুলো আলাদা আলাদা করে কাটাকে ফেব্রিক কাটিং বলে। নিচের ভিডিওটা দেখলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।
প্রথমে কিছু বিষয়ে ধারনা রাখতে হবে। খুব সহজ করে বলি। মনে করুন আপনার কাছে কিছু ফেব্রিক আছে। আপনি চাইছেন সেই ফেব্রিক দিয়ে একটা টি-শার্ট বানাতে। প্রথমে আপনি কাপড়টা সমান করে শক্ত মেঝে বা টেবিলের উপর বিছাবেন। এরপর কাটবেন এবং এরপর সেলাই করে পরিধানের উপযোগী করবেন। বাসায় আপনি হয়তো আপনার মা বোনদের এইভাবে কাপড় বানাতে দেখেছেন কিংবা দর্জির দোকানে খেয়াল করলেই এই প্রসেসগুলো দেখতে পারবেন।
এখানে, ফেব্রিক বেছানোকে আমরা স্প্রেডিং বা লেয়িং বলছি। কেঁচি দিয়ে মেজারমেন্ট অনুসারে কাটাকে কাটিং বলছি। আমরা বাসায় সাধারনত একটি গার্মেন্টস তৈরী করি একবারে, তাই স্প্রেডিং এবং কাটিং একটা গার্মেন্টসের জন্যও হয়ে থাকে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা একাধিক গার্মেন্টস একই সময়ে আউটপুট হিসাবে বের করি ।
এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, আপনি যদি একটা ফেব্রিক বিছিয়ে কাটেন যে সময় লাগবে একাধিক ফেব্রিক একটার উপর আরেকটা বিছিয়ে কাটেন এটার ক্ষেত্রেও কাটিং সময় একই থাকবে।
ফেব্রিক কাটিং SMV এর ফ্যাক্টর সমূহঃ-
১. কাটিং টাইমঃ-
১.১. কাটিং লেন্থঃ-
প্রথমে আপনাকে প্যাটার্নের পরিধিগুলোর মেজারমেন্ট নিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ নাইফ যে লাইন বরাবর কাটবে তার পরিমাপ নিয়ে নিতে হবে। এটাই হবে কাটিং এরিয়া। এবং কাটিং এরিয়া ইয়ার্ডসে এবং ইঞ্চিতে কনভার্ট করে নিবেন।
ধরা যাক, যে গার্মেন্টস কাটিং হবে তার পার্টস দুইটি এবং এদের পরিধির মাপ যথাক্রমে,
পার্টস-১ঃ- ১২২ সে.মি.
পার্টস-২ঃ- ১০৮ সে.মি.
মোটঃ- ২৩০ সে.মি.
ধরি,
মার্কার পিস= ২০
সুতরাং মোট কাটিং এরিয়া = ২৩০ সে.মি. * ২০
= ৪৬০০ সে.মি. বা, ৪৬০০/২.৫৪ ইঞ্চি
= ১৮১১ ইঞ্চি
১.২. কাটিং টাইম ক্যালকুলেশনঃ -
আমরা ৫.৫ ইয়ার্ডসের কাটিং টাইম ধরেছি ১ মিনিট। খেয়াল করবেন এই ৫.৫ ইয়ার্ডস (গজ) কিন্তু মার্কার লেন্থ না। এটা কাটিং এরিয়া। অর্থাৎ যে লাইন বরাবর বা যে সেপ বরাবর নাইফ কাটতে থাকবে তার মোট যোগফল।
ধরা যাক,
আমাদের যে মার্কার ওটা সম্পূর্ণ কেটে শেষ করতে নাইফকে ১৮১১ ইঞ্চি এরিয়া কাটিং করতে হবে। যা ৫০ ইয়ার্ডস বা গজ । এখন ৫.৫ ইয়ার্ডসের কাটিং টাইম যদি ১ মিনিট হয় তাহলে ৫০ ইয়ার্ডসের কাটিং টাইম হবে,
=(১*৫০)/৫.৫ মিনিট
=৯.১৪৭ মিনিট- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - [১]
২. নাইফ সার্পেন টাইমঃ-
২.১. নাইফ সার্পেন ফ্রিকোয়েন্সিঃ-
অর্থাৎ কত ইঞ্চি পরপর নাইফ সার্প করবে সেটা সেট করে দিতে হবে। সাধারনত ১২০ ইঞ্চি কাটিং কমপ্লিট করার পরপর নাইফ সার্প করে।
২.২. নাইফ সার্পেন কোয়ানটিটিঃ-
আপনার কাছে এখন মোট কতটুকু এরিয়া নাইফ কাটবে সেটা আছে। মোট এরিয়াকে ১২০ ইঞ্চি দ্বারা ভাগ করলে পেয়ে যাবেন আপনার কাটিংটি সম্পন্ন করতে নাইফকে কতবার সার্প করতে হবে।
প্রতিবার নাইফ সার্প করতে কত সময় লাগে সেটা হিসাব করতে হবে। সাধারনত ২.৫ সেকেন্ড সময় নেয় নাইফ একবার সার্প হতে।
ধরা যাক, আমাদের মোট কাটিং এরিয়া ১৮১১ ইঞ্চি। প্রতি ১২০ ইঞ্চি পরপর নাইফ সার্প করে। তাহলে ১৮১১ ইঞ্চি কাটতে নাইফ সার্প হবে, ১৮১১/১২০= ১৫.০৯ বার
২.৩. নাইফ সার্পেন টাইম ক্যালকুলেশনঃ-
একবার সার্প হতে সময় লাগে, ২.৫ সেকেন্ড।
সুতরাং, ১৫.০৯ বার নাইফ সার্পিং এর মোট টাইম,
= ১৫.০৯*২.৫ সেকেন্ড
= ৩৭.৭২৫ সেকেন্ড
= ০.৬৩ মিনিট- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - [২]
৩. কাটিং প্রিপারেশন টাইমঃ-
৩.১. বাইট কোয়ানটিটিঃ-
অটো কাটিং মেশিনে কাটিং বেড সাধারনত দুই ইয়ার্ডেস মত হয়। কিন্তু আমাদের মার্কার লেন্ততো সাধারনত ৬-৯ ইয়ার্ডের মত হয় অর্থাৎ একটি সম্পূর্ণ কাটিং সম্পন্ন করতে দুই তিনবার বা আরও বেশী সংখ্যকবার লে-কে কাটিং বেডে ঢুকাতে হয়। তবে যদি মার্কার লেন্থ দুই ইয়ার্ড বা তার কম হয় তবে একবারে কাটিংটি সম্পন্ন করা যায়।
ধরা যাক,
আমাদের মার্কার লেন্থ,
৫ ইয়ার্ড ৩ ইঞ্চি = (৫*৩৬+৩) ইঞ্চি
= ১৮৩ ইঞ্চি
৩.২. বাইট কোয়ানটিটি ক্যালকুলেশনঃ-
আমরা প্রতি বাইট ধরে নিব ৪৫ ইঞ্চি বা ১.৫ ইয়ার্ড।
আমাদের মোট মার্কার লেন্থ ১৮৩ ইঞ্চি।
সুতরাং, এই মার্কারটি সম্পূর্ণ কাটতে হলে মোট বাইট দরকার হবে,
=১৮৩/৪৫ টি
=৪.০৭ টি, অর্থাৎ কাটিংটি সম্পন্ন করতে ৫ বার বাইট দিতে হবে ।
৩.৩. কাটিং প্রিপারেশন টাইম ক্যালকুলেশনঃ-
আমরা বাইটের কোয়ানটিটির উপর ভিত্তি করে একটা কাটিং প্রিপারেশনের স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছি। কাটিং প্রিপারেশন বলতে বুঝানো হচ্ছে ফেব্রিকের লে এর দুই প্রান্তের দৈর্ঘ্য বরাবর কাটা, মার্কার পেপার বিছানো, মার্কার পেপার বিছিয়ে লে এর লেন্থ ওয়াইডথ চেক করা ইত্যাদি।
৪.০১-৫.০৫টি বাইটের জন্য আমরা কাটিং প্রিপারেশন টাইম সেট করেছি
৩.৫ মিনিট- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - [৩]
৪. বাইট প্রিপারেশন টাইমঃ-
৪.১. বাইট প্রিপারেশন কোয়ানটিটিঃ-
প্রথম বাইট প্রিপারেশনের টাইম আলাদাভাবে নেওয়ার দরকার নেই কারন প্রথম বাইটের সময়টা কাটিং প্রিপারেশনের ভিতরে চলে আসে। তাহলে বাইট প্রিপারেশনের কোয়ানটিটি হবে মোট মার্কার লেন্থকে ৪৫ ইঞ্চি দ্বারা ভাগ করে যে কোয়ানটিটি পেয়েছি (৩.২. দ্রষ্টব্য) তার চেয়ে ১ কম।
অর্থাৎ বাইট প্রিপারেশন কোয়ানটিটি হবে, ৪.০৭-১ = ৩.০৭
৪.২. বাইট প্রিপারেশন টাইম ক্যালকুলেশনঃ-
বাইট প্রিপারেশন বলতে বুঝানো হয়েছে, একটা বাইট সম্পন্ন হওয়ার পর অর্থাৎ মার্কার লেন্থের ৪৫ ইঞ্চি বা দেঢ় গজ কাটিং সম্পন্ন হওয়ার পর পরের ৪৫ ইঞ্চি আবার কাটিং বেডে প্রবেশ করাতে যে সময়টা লাগে। এখানে বেশ কিছু কাজ করতে হয় যেমন, পলি বিছানো, কাটিং এক্সিস ঠিক করা, ফেব্রিক ওয়াইডথ চেক করা ইত্যাদি।
আমাদের প্রতি বাইট প্রিপারেশনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড টাইম ধরা হয়েছে ০.৭৫ মিনিট।
অর্থাৎ, ৩.০৭টি বাইট প্রিপারেশন টাইম,
=৩.০৭*০.৭৫ মিনিট
=২.৩০ মিনিট- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - [৪]
৫. নচ বা কাট মার্কের টাইমঃ-
৫.১. নচ বা কাট মার্ক কোয়ানটিটিঃ-
ধরা যাক,
মার্কার পিস= ২০
এক পিসের গার্মেন্টসের পার্ট সংখ্যা = ২
প্রতি পিসে কাট মার্ক আছে = ৪ টি
সুতরাং, মোট কাট মার্ক কোয়ানটিটি = (২*৪*২০)
= ১৬০ টি
৫.২. নচ বা কাট মার্ক টাইম ক্যালকুলেশনঃ-
একটা নচ বা কাট মার্ক দিতে আমরা সময় ধরেছি ১ সেকেন্ড অর্থাৎ ০.০১৬৬৭ মিনিট। এবং আমাদের মোট কাট মার্ক কোয়ানটিটি ১৬০ টি।
সুতরাং, নচ বা কাট মার্ক দেওয়ার মোট সময়,
=১৬০*০.০১৬৬৭ মিনিট
=২.৬৬৭ মিনিট- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -[৫]
সুতরাং মোট কাটিং টাইম হবে উপরোক্ত ৫টি সমীকরনের যোগফল।
অর্থাৎ, সমীকরন [১] + সমীকরন [২] + সমীকরন [৩] + সমীকরন [৪] + সমীকরন [৫]
= ৯.১৪৭ + ০.৬৩ + ৩.৫ + ২.৩০ + ২.৬৬৭
= ১৮.২৪৪ মিনিট
0 Comments