টেক্সটাইল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সচরাচর ২০টি কমন প্রশ্নের উত্তর
১. ফার্স্ট চয়েস কোন কলেজ দেব?
এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনা করবে:
- বাসা থেকে দূরত্ব কতখানি
- পড়াশোনার পরিবেশ কেমন: যেমন ছাত্র রাজনীতি, আবাসন, পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে কিনা
- শক্তিশালী এলামনাই আছে কিনা: ক্যারিয়ার গঠনে এটা কাজে দেয়।
২. ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হয় নাকি সহজ?
প্রশ্ন কঠিন হলে সবার জন্যই কঠিন হবে, সহজ হলে সকলের জন্য সহজ হবে। মোদ্দা কথা প্রশ্ন যেমনই হোক, সেরা ছাত্ররা টিকবে।
৩. মাইগ্রেশনের সুযোগ আছে কিনা?
জ্বি আছে। কোন কলেজে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আমি মাইগ্রেশন না করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। কারণ মাইগ্রেশন করলে অনেক সময় নিজের পছন্দমত ডিপার্টমেন্ট চয়েজ করার সুযোগ থাকে না।
৪. কোন ডিপার্টমেন্ট বেশি ভালো?
ইয়ার্ন, ফেব্রিক, ওয়েট, অ্যাপারেল.. কলেজগুলোতে এই চারটি ডিপার্টমেন্ট আছে বর্তমানে। সবগুলো ডিপার্টমেন্টেরই কিছু আলাদা জব আছে। আবার কিছু সেক্টর আছে যেখানে সব ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররাই চাকরি করতে পারে।
৫. পড়াশোনা কি অনেক কঠিন, না সহজ?
কঠিন মনে করলে অনেক কঠিন, আর সহজ মনে করলে একেবারে সহজ। প্রকৃত বিষয় হল, ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট হিসেবে এটি তুলনামূলক বেশ সহজবোধ্য। তবে নিজেকে এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।
৬. নিয়মিত ক্লাস করা লাগে?
হ্যাঁ, অবশ্যই ক্লাস করা লাগবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অন্যান্য জেনারেল সাবজেক্টের মত নয় যে, পরীক্ষার আগে এক মাস পড়ে সব মুখস্ত করে পাশ করে ফেলবে। ইঞ্জিনিয়ারিং থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস, সমান গুরুত্বপূর্ণ।
৭. চাকরির বাজার কেমন?
এখনো এভেলেবল চাকরি আছে। পাস করে বেশিদিন বসে থাকতে হয় না।
৮. শুরুতে স্যালারি কেমন?
শুরুতেই লাখ টাকা পাওয়া যায় এই ধরনের গাল গল্পে বিশ্বাস করবে না। বর্তমানে স্টার্টিং স্যালারি ১৫-২৫ হাজার। তবে পরিশ্রম করলে ৫-৭ বছরে ম্যানেজারিয়াল লেভেলে যাওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে স্যালারি ৬ ডিজিটে পৌঁছে যাবে।
৯. টেক্সটাইলে নাকি অনেক পরিশ্রম?
জি, জীবনে সফল হতে হলে পরিশ্রম অবশ্যই করতে হবে। যে কোনো সেক্টরেই। টেক্সটাইলেও যদি আপনি খুব দ্রুত সফলতা চান তাহলে পরিশ্রম করবেন। যদি আপনার টার্গেট হয় মোটামুটি ভাবে জীবন যাপন করে যাবেন, তাহলে মোটামুটি পরিশ্রম করলেই হবে।
১০. এই সেক্টরে জব করলে নাকি ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকেনা?
যে কোন ভাল সেক্টরেই ব্যক্তিগত জীবন বলে আলাদা কিছু থাকে না। ক্যারিয়ারকেই আপনার জীবন বলে গণ্য করতে হবে, হোন আপনি সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, প্রশাসন ক্যাডার কিংবা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তারপরও কেন জানি অন্য সেক্টরগুলোতে এই প্রশ্ন উঠে না, শুধু টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে উঠে।
১১. টেক্সটাইলে পড়ে সরকারি চাকরি পাওয়া যায়?
জি, আমিও সরকারি চাকরি করছি। কলেজগুলো থেকে পাশ করে এখন অনেকেই ক্যাডার এবং নন ক্যাডার বিভিন্ন পদে সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছে।
১২. টেক্সটাইলে নাকি নাইট ডিউটি করতে হয়?
টেক্সটাইল সেক্টরে তিরিশেরও অধিক জব ক্যাটাগরি আছে। তার মধ্যে ৩-৪টিতে নাইট ডিউটি করা লাগে। বাকিগুলোতে লাগে না।
১৩. টেক্সটাইলের ভবিষ্যৎ কেমন?
আশা করি ভালো। বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ (প্রায় ৮২-৮৪%) আসে টেক্সটাইল সেক্টর থেকে। তাই অন্য যেকোনো সেক্টরের তুলনায় এটি অনেক বেশি সিকিউর্ড এবং ডাইভার্সিফাইড।
১৪. উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ আছে কিনা?
আছে। অনেকে টেক্সটাইলে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে না ঢুকে নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাচ্ছে। আমার বেশ কয়েকজন ছাত্র খুব অল্প সময়ে সফল হয়েছে।
১৫. বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করার পরে মাস্টার্স বা এমবিএ করা লাগবে?
প্রাইভেট সেক্টরে জবের ক্ষেত্রে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিই যথেষ্ট। উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। যদি শিক্ষকতা কিংবা গবেষণায় পেশা গড়তে চাও, তাহলে মাস্টার্স বা এমবিএ করতে পারো।
১৬. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কি বিসিএস দেওয়া যায়?
টেক্সটাইলে আলাদাভাবে ক্যাডার নেই। তবে সাধারণ ক্যাডার যেমন: প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র ইত্যাদিতে চাকরির সুযোগ আছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো থেকে পাশ করে অনেকেই ক্যাডার হয়েছে।
১৭. শিক্ষক হওয়ার সুযোগ আছে?
জি, আছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে অনেকেই এখন সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
১৮. টেক্সটাইলে পড়ে বাহিরে যাওয়া যায় কিনা?
প্রতিবছর অনেক ছাত্র উচ্চ শিক্ষার জন্য (মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি করতে) বাহিরে যাচ্ছে। এমনকি মোটামুটি রেজাল্ট নিয়েও তারা স্কলারশিপ পেয়ে যায়।
১৯. টেক্সটাইল ক্যারিয়ার কতটুকু নিরাপদ?
যেকোনো চাকরিতে কিছু রিস্ক থাকবেই। সরকারি চাকরিজীবীরাও অনেক সময় সাসপেন্ড হয়, ব্যাংকারদের টার্মিনেট করা হয়, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে লোক ছাটাই করা হয়। এরকম টেক্সটাইলেও কিছু রিস্ক আছে। কিন্তু এই সেক্টরের একটা বড় সুবিধা হল- যদি কারো চাকরি চলেও যায়, খুব দ্রুত আরেকটা চাকরি সে ম্যানেজ করে নিতে পারে। যেটা সরকারি চাকরির কিংবা ব্যাংকারদের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
২০. ভালো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে কি কি গুণাবলী লাগে?
অন্তত তিনটা গুনাবলী অবশ্যই লাগবে:
- কর্মদক্ষতা বা এফিসিয়েন্সি
- টেকনিক্যাল নলেজ
- প্রোএকটিভ এটিচিউড
______
ত্বরিক বিন মুতালিব
প্রভাষক (কারিগরি) ও বিভাগীয় প্রধান
ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, সিটেক
সিইও, টেক মিডিয়া
সঞ্চালক, টেক শো
উপদেষ্টা, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব
পরিবেশকঃ- TEXANDTECH
0 Comments