আসসালামু আলাইকুম,
আশা করি সবাই ভাল আছেন। কর্পোরেট_ফ্যাক্টের ২৮তম পর্ব আজকে। ২৭তম পর্ব লেখা হয়েছিল ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে। মানে প্রায় এক বছর আগে। যারা এই চাকরী জগতে আছেন বা ঢুকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্য ধারাবাহিকটা একদম নির্ভরশীল একটা দিক নির্দেশনা। কেউ যদি নিয়মিতভাবে প্রথম থেকে ২৭তম পর্ব পর্যন্ত পড়েন এবং শিক্ষা নিতে পারেন তবে আশা করছি তার চাকরিজীবনে সেরকম বেগ পেতে হবেনা ইন-শা-আল্লাহ। বেশ কিছু টপিক , বেশ কিছু চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কয়দিন যাবৎ। কোন বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। যেহেতু আমরা চাকরি করছি এবং আমরা আমাদের সময়টাকে আমাদের কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছি টাকার বিনিময়ে সেহেতু টাকা নিয়েই কথা বলি।
প্রত্যেকের চাকরি জীবন টাকার সাথে সম্পর্কিত। কোম্পানি আপনাকে কাজের বিনিময়ে স্যালারি দিচ্ছে আপনি কাজ করছেন। কেউ শুধু শুধু খুশীতে কাজ করছেন বা ভাল লাগছে তাই কাজ করছেন ব্যাপারটা আমাদের অধিকাংশ বাঙালীর সাথে যায়না। আমরা যখন কোথাও চাকরি করছি তখন আমাদের আসলে কোন কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিৎ চলুন দেখে নেই।
২. কাজের প্রেসার কেমন
৩. কাজের পরিবেশ কেমন (কাজের সম্মান এবং জব স্যাটিসফেকশন)
৪. অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কেমন
অর্থাৎ মাসশেষে আপনি কত টাকা বেতন পাবেন, এই বেতন পেতে আপনাকে কি পরিমান শ্রম দিতে হবে (এই শ্রম দেওয়ার জন্য আপনি মানসিক এবং শারীরিকভাবে সবল কিনা), আপনি যে স্থানে কাজ করবেন সেই স্থানের কলিগ, ম্যানেজমেন্ট কেমন বা আপনি আপনার কাজের জন্য সম্মান পাচ্ছেন কিনা সেইসাথে আপনি সন্তুষ্ট কিনা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অর্থাৎ মোবাইল বিল, ছুটি পাওয়া, হাজিরা বোনাস ইত্যাদি।
এখন এই চারটা বিষয়কে আপনার প্রায়োরিটি অনুসারে সাজাতে হবে। প্রায়োরিটি নির্ভর করবে আপনার জীবনের উদ্দেশ্যের উপর। আপনি আপনার আশেপাশে দুই ধরনের মানুষ পাবেন।
ক) যাদের জীবনের মুল উদ্দেশ্য এবং ফোকাস পয়েন্ট ক্যারিয়ার। অর্থাৎ তাদের জীবনের উদ্দেশ্য বড় কোন পজিশনে যাওয়া যাতে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারে। মোটামুটি নিজে একজন জিএম বা ফ্যাক্টরি মালিক হতে পারলে তারা তাদের জীবনে সফল বলে বিবেচিত হয়।
তাহলে "ক" শ্রেণির মানুষ প্রায়োরিটি লিস্টে স্যলারি কত দিচ্ছে এটাকেই মুল হিসাবে দেখবে। আজকে ৫০ হাজারে আছে, ১০ হাজার বেশী অফার পাবে সেখানে চলে যাবে। বা আজকে এক্সিকিউটিভ হিসাবে আছে একমাস পর সি. এক্সিকিউটিভের অফার পাবে সেখানে চলে যাবে। এটাকে এতটা নেগেটিভলি দেখার কিছু নাই। দিনশেষে "You sold your time for the want of money"
খ) আরেক ধরনের মানুষ পাবেন এরা নিজের জীবনকে খুব সংক্ষিপ্ত একটা জার্নি হিসাবে দেখে। ৬০-৭০ বা ৮০ বছরের একটা জার্নি বলা চলে। তাদের মুল লক্ষ্য থাকে মোটামুটি সম্মানজনকভাবে জীবন অতিবাহিত করা। এদের সফলতা বা জীবনের মুল উদ্দেশ্য পরপারের জন্য সম্পদ অর্জন করা। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে এই শ্রেণির মানুষগুলো প্রচুর পরিমান উপার্জন করাটাকে সেকেন্ডারি হিসাবে বিবেচনা করে। মোটামুটি সংসার নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে আর কর্মক্ষেত্রে ভাল কলিগদের সাথে কাজ হচ্ছে এটাই যথেষ্ট।
তাহলে "খ" শ্রেণির প্রায়োরিটি লিস্টে প্রথমে থাকবে ভাল একটা কর্ম পরিবেশ সেইসাথে নির্বিঘ্নে সংসার অতিক্রম করা যাবে এরকম একটা স্যালারি রেঞ্জ। এবং অবশ্যই তার মুল উদ্দেশ্য আখিরাতের জন্য পাথেয় অর্জন করা এরসাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছুই সে কম্প্রোমাইজ করবেনা।
এখন আপনি কি করবেন? বা কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। চলুন আলোচনা করি। চারটা বিষয়ের মধ্যে প্রথম আপনি খবর নিবেন স্যালারি রেঞ্জ মোটামুটি আপনার ফ্যামিলি মেইন্টেইন করা যায় এই পরিমান কিনা! যদি হ্যাঁ হয় এরপর খোঁজ নিবেন কর্ম পরিবেশ কেমন এবং আপনার মেধা যথাযথ ব্যবহার করার স্কোপ পাবেন কিনা? এগুলো হ্যাঁ হলে আপনি জয়েন করুন। জয়েন করার পরে নিজের দক্ষতাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগানোয় সচেষ্ট থাকুন। যখন মনে হবে, আপনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নেক্সট স্টেপে যাওয়ার জন্য তখন সুইচ করতে চেষ্টা করুন। তবে শুধু টাকার পরিমান দেখে সুইচ করবেননা। আপনার দক্ষতার যথাযথ ব্যবহার হয় এরকম প্রতিষ্ঠান দেখে সুইচ করুন। যখন আপনি পরপারে সফলতাকে প্রায়োরিটি লিস্টের শুরুতে রাখবেন, রিজিক্কের ব্যাপারে নির্ভার থাকবেন এবং নিজের প্রতি সৎ থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন তখন আপনি দুনিয়ায় সফলতা পাবেন এবং আখিরাতেও আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করবেন ইন-শা-আল্লাহ।
*লেখক স্বত্ত্বঃ- Mamun Rezwan
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
0 Comments