কখনও কি ভেবে দেখেছেন ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে এতটা পার্থক্য রাখা হয়েছে কেন?
যেমনঃ- ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ইচ্ছামত খেতে পারছেন, শপিং করলে পাচ্ছেন ১০% ডিসকাউন্ট এবং ক্যাশব্যাক, প্লেনে টিকেট কাটলে ১০% ক্যাশব্যাক এমনকি যেকোন কিছু কিনলেই পাবেন ১% ক্যাশব্যাক। কিন্তু ডেবিট কার্ডে কেন এই সুবিধাগুলো পাচ্ছেন না। আফটার অল দুইটা থেকেই টাকা কাটছে বা আপনাকে খরচ করতে হচ্ছে।
কিন্তু কেন ডেবিট কার্ডে এত অফার দেওয়া হচ্ছেনা, ভেবেছেন কখনও? অথচ ক্রেডিট কার্ডের টাকাটা আপনার টাকাও না, ব্যাংকের টাকা।
চলুন কিছু ডাটা এনালাইসিস করি।
বাংলাদেশে ০.৬২% মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। আর পুরো বিশ্বে এই শতকরাটা ২২%, খোদ আমেরিকাতেই প্রতি একজন এভারেজে ৪টা করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।
২০০০ সালের আগেও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে এত রমরমা বা প্রচার প্রচারনা ছিলনা। তাহলে কি এমন হোল যে, মাত্র দুই দশকে এতটা পার্থক্য চলে আসল? সহজ কিছু কারন আছে এর পিছনে,
১. ক্যাশ টাকা ক্যারি করতে হচ্ছেনা।
২. আপনার কাছে টাকা না থাকলেও কার্ড দিয়ে ইমার্জেন্সী মোমেন্টে চাহিদা পুরন করতে পারছেন।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন আমেরিকাতে ঘর বাড়ি কিনতে গেলেও কিন্তু ক্রেডিট স্কোর লাগে।
এইযে, ক্যাশ ক্যারি না করা কিংবা দরকারে সাথে সাথে ক্যাশ পেয়ে যাওয়া এটাতো ডেবিট কার্ডেও আছে তাহলে মুল ট্র্যাপটা কোথায়? এখানেই চলে আসছে বিজনেস।
ক্রেডিট কার্ডে মানি বেটার, বিজনেস বেটার, টাকা বেটার। কেন? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
ক্রেডিট কার্ডে আপনি টাকা ব্যবহার করছেন ব্যাংকের। এক্ষেত্রে কিন্তু ব্যাংক আপনাকে লোন দিচ্ছে খরচ করার জন্য। এবং এর বিপরীতে তারা খুব ভাল এমাউন্টের একটা ইন্টারেস্ট রাখছে। আর ডেবিট কার্ডে আপনি নিজের টাকা খরচ করছেন। ব্যাংক ভেদে এই ইন্টারেস্টের পরিমান প্রতি মাসে ২.৫% থেকে ৩.৫% পর্যন্ত। আসলে ব্যাংক আপনাকে আপনার নিজের টাকা খরচ করতে না দিয়ে চাচ্ছে, আপনি যেন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তাদের থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা খরচ করেন এবং মাস শেষে ইন্টারেস্ট দেন।
আরও দুইটা পদ্ধতি আছে তাদের এই ক্রেডিট কার্ড বিজনেসের।
১. ইন্টারচেঞ্জ ফিঃ
অর্থাৎ আপনি যতবার আপনার ক্রেডিট কার্ড সোয়াইপ করছেন ততবার খুব ছোট একটা এমাউন্ট আপনার একাউন্ট থেকে কেটে রাখা হচ্ছে। ছোট একটা এমাউন্ট বললেও এটা যে, আসলে কতটা বড় সেটা ২০১৮ সালের আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের একটা ডাটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।
২০১৮ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস এই ইন্টারচেঞ্জ ফি'র মাধ্যমে ২৪ বিলয়ন ডলার ইনকাম করে যার মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার তারা ব্যয় করে রিওয়ার্ডসের পিছনে এবং বাকী ১৪ বিলয়ন ডলার থাকে ফুল প্রফিট।
২. পেনাল্টি অফ লেইট পেমেন্টঃ
২০২৩ সালে আমেরিকায় ক্রেডিট কার্ডে টাকা ব্যবহারের পরিমান ছিল ৯৮৬ বিলিয়ন ডলার মানে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
২০২২ সালে ১৮ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী তাদের লোন পরিশোধ করতে পারেনি সময়মত। এরকমভাবে যদি আপনি ১৮০ দিনের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে না পারেন তবে ব্যাংক আপনার এমাউন্টের উপর Annual Percentage Rate (APL) বাড়াতেই থাকে।
সবশেষে সাইকোলোজির একটা খেলা দেখব চলুন।
আমরা মানুষরা বর্তমানকে নিয়ে প্রচন্ড এগ্রেসিভ। আমরা কোন একটা কাজের ভবিষ্যত ইম্প্যাক্ট খুব বেশী চিন্তা ভাবনা করিনা। এই থিমটাকে কাজে লাগিয়ে দেখবেন ক্রেডিট কার্ডের প্রচুর প্রমোশনাল এক্টিভিটি। যেমন, আড়ং থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে অমুক % ক্যাশব্যাক, এখান থেকে কিনলে অমুক ফ্রি ইত্যাদি।
এবার MIT এর রিসার্চ করা একটা ডাটা দেখা যাক চলুন।
MIT তাদের প্রকাশিত রিসার্চ পেপারে উল্লেখ করেছে, ক্যাশ টাকা ব্যবহার করা একজন ব্যাক্তির খরচের হারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা একজন ব্যাক্তির খরচের হার ১১৩% বেশী।
খরচের হার বেশী হওয়ার পেছনে সাইকোলোজিকার ব্যাপারটা হোল, আপনি যখন বাজারে এক হাজার টাকার একটা নোট নিয়ে যাবেন তখন সেটা খরচ করতে আপনার একটা স্যাড ফিলিংস আসবে কারন এই অনুভুতিটা আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করে আসছি কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটাতে সেরকম স্যাড ফিলিংস তৈরী হয়না। এটা শুধুমাত্র অনুভুতি তাই না। এটা সাইন্টিফিকালিও প্রুভেন। আমাদের ব্রেইন কার্ড সোয়াইপ করা, টাকা গুনে ক্রেতার হাতে দেওয়া, মেশিনের টাকা কাউন্টের কড়কড় শব্দ এগুলার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন অনুভুতি তৈরী করে। টাকা গুনে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ব্রেইন যেভাবে স্যাড একটা অনুভুতি তৈরী করে কার্ড সোয়াইপ করে পেমেন্ট করার মাধ্যমে ব্রেইন সেভাবে গুরুত্ব দেয়না অর্থাৎ খরচের ব্যাপারটাকে আমলে নেয়না।
BOSTON UNIVERSITY-এর প্রফেসর Carey Morewedge- এর একটা থিওরী আছে এ ব্যাপারে।
প্রাইস জিনিসটা এবসোল্যুট কিছুনা এটা একটা রিলেটিভ জিনিস। এর মানে হোল আমাদের ব্রেইন কোন কিছুর প্রাইস ঠিক করে আমার সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে।
অর্থাৎ আপনি যদি, মনে মনে ১০০০ টাকা বাজেটের একটা প্যান্ট কিনার পরিকল্পনা করেন তখন প্যান্টের উপযুক্ত প্রাইস ১০০০ই মনে হবে।
খেলটা এখানেই। আপনার হাতে যেহেতু ক্রেডিট কার্ড আছে তাই আপনার আর বাজেট করতে হচ্ছেনা কত টাকার প্যান্ট কিনবেন। তাই আপনি ইচ্ছামত প্রাইস দিচ্ছেন একটা প্যান্টের পিছনে। অর্থাৎ আপনার সক্ষমতার সীমানাকে অসীম করে দিয়েছে ক্রেডিট কার্ড।
বিঃদ্রঃ- এই টপিকের উপর আরেকটা পর্ব লেখার ইচ্ছা আছে যদি আপনাদের উৎসাহ পাই।
কন্টেন্ট কালেক্টেড ঃ- Nafees Selim
*লেখক স্বত্ত্বঃ- Mamun Rezwan
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত
2 Comments
অনেক সুন্দর ভাবে আসল ব্যাপার টা ফুটিয়ে তুলেছেন, ধন্যবাদ।
ReplyDeleteজাঝাকাল্লাহু খাইরান। আমাদের পোস্টগুলো শেয়ার করবেন এবং বেশী বেশী মানুষকে জানার সুযোগ করে দিবেন ইন-শা-আল্লাহ।
Delete