Ticker

6/recent/ticker-posts

"মার্চেন্ডাইজিং এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টরী"


মনে করুন আপনি একটি ফ্যাক্টরির মার্চেন্ডাইজিং ডিপার্টমেন্টে আছেন। প্রোডাকশন লাইনের হেড আপনাকে জানাল একটা মেশিনের পার্টস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একটা লাইন বন্ধ আছে। সে আপনাকে এটাও জানাল যে, এই পার্টস আমাদের দেশেও তৈরী হয় কিন্তু চীন থেকে আনালে খরচ কম পড়বে। তখন কি আপনার মনে এই চিন্তা আসবে না যে, লোকাল মার্কেটে খরচ বেশী কিভাবে হয়? বেশী হওয়ার কথাতো ইম্পোর্ট করলে। কারন ইম্পোর্টে অনেকগুলো প্রসেস পার হতে হবে। 
যেমনঃ এক্সপোর্ট, ইম্পোর্টের অনুমোদন পাওয়া, কাস্টমসের ফর্মালিটি, শিপিং কস্ট ইত্যাদি। সেই হিসাবে লোকাল মার্কেটে যে জিনিসের দাম ১০০টাকা হওয়ার কথা বাইরে থেকে ইম্পোর্ট করতে গেলে সেই প্রোডাক্টের দাম মিনিমাম ১৫০তো হওয়া উচিৎ। তাই নয় কি?

কিন্তু তবুও চীন থেকে আনতে গেলে আমাদের খরচ কেন কম পড়ে? বিশেষ করে ইলেক্ট্রিক্স পন্যগুলো । এই প্রশ্ন স্বভাবতই আসে আমাদের মনে? উত্তর আসছে এবং যারা মার্চেন্ডাইজিং-এ  ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাদের জন্য এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারন প্রফিট সব কিছুর মূলে।


চিত্রঃ ইউপা ফ্যাক্টরী (The largest factory on Earth)


তার আগে চলুন চীনের একটা ফ্যাক্টরির কথা জেনে আসি। ইউটিউবে “The largest factory in the earth” লিখে সার্চ করলে EUPA নামের একটা ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকটা ডকুমেন্টারি দেখতে পাবেন। হুম এটা দক্ষিন চীনে অবস্থিত। প্রায় ১৮ কি.মি. দৈর্ঘ্যের ফ্যাক্টরি এটি।  এখানে ১৭০০০ কর্মী কাজ করে। পুরো একটা শহরের সমান জায়গা দখল করে আছে এই ফ্যাক্টরীটি তাই একে Factory City বলা হয়ে থাকে। এই ফ্যাক্টরির ব্যাপারে একটা কথা প্রচলিত আছে। They live there, They eat there, Their children attend to school there. হুম ঠিকই ধরেছেন এই ফ্যাক্টরিতে কর্মরত অধিকাংশ কর্মীর জন্ম এই ফ্যাক্টরির এরিয়াতেই। এখানে তাদের বেড়ে ওঠা। এখানেই তাদের বিয়ে, সন্তান, সংসার, মৃত্যু সব। তারা প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন ইলেক্ট্রনিক্স পন্য যেমন আইরন, কফি মেকার, চার্জার লাইট, ব্লেন্ডার ইত্যাদি তৈরী করে থাকে।




এবার চলুন উপরের প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক। কেন চীন থেকে ইম্পোর্ট করলে আমাদের লোকাল মার্কেটের তুলনায় খরচ কম পড়ে? এই জন্য আমাদের মেনুফ্যাকচারিং কস্ট সম্পর্কে জানতে হবে। কোন প্রোডাক্ট তৈরীতে মূলত দুইটি প্রধান কস্ট  জড়িত।

১. ফিক্সড কস্ট
ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন হোক বা না হোক যে কস্টগুলো অবশ্যই হবে তা ফিক্সড কস্ট হিসাবে পরিচিত। যেমনঃকর্মীদের স্যালারি, ইলেক্ট্রিক বিল, মেইনটেনেন্স বিল ইত্যাদি। 

২. ভেরিএবল কষ্ট      
প্রোডাকশনের জন্য যে কস্টগুলো হয়ে থাকে। যেমনঃ কাঁচামালের কস্ট, ইনভেন্টরি কস্ট ইত্যাদি।

অর্থাৎ কোন একটা প্রোডাক্টের কস্ট= ফিক্সড কস্ট+ ভেরিএবল কস্ট


এবার উদাহরনে চলে যাই,
ধরা যাক,
একটি ফ্যাক্টরির ফিক্সড কস্ট= ১০,০০,০০০$
ফ্যাক্টরিতে ১০,০০০ পিস প্রোডাক্টের জন্য ভেরিএবল কস্ট= ৫,০০,০০০$

সুতরাং ১০,০০০পিস প্রোডাক্টের মোট কস্ট= ১০,০০,০০০$+ ৫,০০,০০০$
                                           = ১৫,০০,০০০$

আবার ২০,০০০ পিসের জন্য ভেরিএবল কস্ট= ১০,০০,০০০$
সুতরাং ২০,০০০পিস প্রোডাক্টের মোট কস্ট= ১০,০০,০০০$+ ১০,০০,০০০$
                                           = ২০,০০,০০০$

এখন ,
দেখা যাচ্ছে  ১০,০০০পিস প্রোডাক্টের প্রতি পিসের কস্ট= (১৫,০০,০০০/১০,০০০)$
                                                                                  =১৫০ $------ (i)
এবং,
দেখা যাচ্ছে  ২০,০০০পিস প্রোডাক্টের প্রতি পিসের কস্ট= (২০,০০,০০০/২০,০০০)$
                                                                                  =১০০ $-------(ii)

বুঝতেই পারছেন, কোয়ানটিটি বাড়ার সাথে সাথে প্রোডাক্ট প্রাইজ কমতে থাকে। একই ফ্যাক্টরি থেকে একই প্রোডাক্ট ১০,০০০পিস কিনলে প্রতি পিসের দাম পড়ছে ১৫০$ কিন্তু ২০,০০০ পিস ক্রয় করলে দাম পড়ছে ১০০$

চীনাদের এম.ও.কিউ (মিনিমাম অর্ডার কোয়ান্টিটি) অত্যন্ত বেশী। অর্থাৎ তাদের কাছ থেকে কোন প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে অনেক বেশী সংখ্যক প্রোডাক্ট একসাথে কিনতে হবে।  ঠিক এই কারনে চাইনিস প্রোডাক্টের দাম এত কম আমাদের দেশে। এবং আমরা একই কোয়ালিটির প্রোডাক্ট বানালেও তাদের চেয়ে বেশী খরচ গুনতে হবে। 

বিঃদ্রঃ- ছবিসমূহ গুগল হতে ডাউনলোডকৃত 
                                        

*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত



Post a Comment

1 Comments

  1. শ্রমঘন্টা তো দুইটাতে এক হবে না, সেক্ষেত্রে কস্ট আরো বাড়বে

    ReplyDelete