আমাদের ব্লগসাইটের নাম TEXANDTECH, যা Textile and Technology এর শর্ট ফর্ম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য টেকনোলোজি রিলেটেড সেরকম সমৃদ্ধ কোন আর্টিকেল এখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ করতে পারিনি। সেই দুঃখ কিছুটা ঘোচাতে এবং আপনাদের আকাঙ্ক্ষা প্রশমিত করতে আজকে টেকনোলোজি রিলেটেড একটা যুদ্ধের কথা বলব। আপনারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন কি এমন ঘটল যে, ১০০শত বছর আগেও দাস বানিজ্যের উপর টিকে থাকা একটা দেশ (আমেরিকা) এখন কিভাবে বিশ্ব শাসন করছে? কিংবা চীন এবং আমেরিকার মধ্যে আসলে স্নায়ুযুদ্ধটার মুল কারন কি?
একেবারে এক কথায় উত্তর হচ্ছে মাইক্রো চিপ। অর্থাৎ যে দেশ যত ক্ষুদ্র মাপের মাইক্রো চিপ তৈরী করতে পারবে সে দেশ প্রযুক্তিগতভাবে তত এগিয়ে থাকবে। মাইক্রো চিপ বা সেমি কন্ডাকটোর আসলে কি? আপনি যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, যে টিভির রিমোট ব্যবহার করছেন, কিংবা যে মাইক্রো ওয়েভ ওভেন চালাচ্ছেন, কিংবা যে ফ্রিজে খাবার রাখছেন প্রত্যেকটা মেশিন কাজ করে এর মাইক্রো চিপের ডিজাইন এবং প্রোগ্রাম অনুসারে।
এখন চলুন দেখি ক্ষুদ্র মাপের মাইক্রোচিপ বলতে কতটা ক্ষুদ্র বোঝায়? আমাদের চুল সাধারনত ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ন্যানোমিটার কিন্তু সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হোল এই মাইক্রোচিপ ৫/৩ এমনকি সিংগেল ন্যানোমিটারে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ যে দেশ যত দ্রুত এই মাইক্রোচিপের মাপ কমিয়ে আনতে পারবে সেই দেশ বিশ্ব শাসন করবে। আমেরিকার IBM দাবি করেছে এখন পর্যন্ত তাদের মাইক্রো চিপ বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মাইক্রো চিপ যার সাইজ ২ ন্যানোমিটার। [১]
চিত্রে দেখতে পারছেন ২ ন্যানোমিটার মাইক্রো চিপের সাইজ।
এই মাইক্রোচিপ আসলে কিভাবে তৈরী হয় বা কারা তৈরী করে। মাইক্রোচিপ তৈরী করতে দরকার ডিজাইন, এবং সেই ডিজাইন সিলিকনের উপর প্রিন্ট করতে লাগে স্পেশাল মেশিন। ৬০এর দশকে আমেরিকার intel কোম্পানি নিজস্ব ভুখন্ডের ভিতরে মাইক্রোচিপ তৈরী করা শুরু করে এবং ডিজাইন প্রিন্টের মেশিন আসে নেদারল্যান্ডের ASML (Advanced Semiconductor Material Lithography) কোম্পানি থাকে। যারা পৃথিবীর একমাত্র এই ডিজাইন প্রিন্টিং করার মেশিন তৈরী করতে পারে। এবং আমেরিকার প্রযুক্তিগত উত্থান ঠিক ৬০এর দশক থেকেই। এরপর ৮০এর দশকে তারা মাইক্রোচিপ তাইওয়ান থেকে আউটসোর্স করা শুরু করে। অর্থাৎ ডিজাইন এবং অন্যান্য র ম্যাটেরিয়ালস দিবে আমেরিকা কিন্তু চিপ তৈরী করে দিবে তাইওয়ান।
কিন্তু বিগত ২০-৩০ বছরে তাইওয়ান মাইক্রো চিপ প্রস্তুতিতে এতটাই উন্নতি সাধন করেছে যে, তারা নিজেরা নিজস্ব ডিজাইনে চিপ তৈরী করা শুরু করেছে। তাদের এই কোম্পানির নাম TSMC (Taiwan Semiconductor Manufacturing Company)। বর্তমান সারা বিশ্বের ৬০-৭০% সেমিকন্ডাক্টর তারা সরবরাহ করে। চীন তাইওয়ানের প্রতিবেশী দেশ, চাইছে তাইওয়ানকে নিজের দেশের অন্তর্ভুক্ত করতে। এদিকে আমেরিকাও তাইওয়ানের উপর স্যাংশন দিয়ে রেখেছে যেন, অন্য কোন দেশের সাথে তাইওয়ান ব্যবসা করতে না পারে।
চীনও বসে থাকার পাত্র নয়, যথেষ্ট কাঠখড় পুড়িয়ে চেষ্টা করছে নিজস্ব প্রযুক্তিতে আমেরিকাকে পাল্লা দিতে। আমেরিকাও ২০০ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে নিজ দেশেই পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করতে। আগে তেল, স্বর্ণ, জমি ইত্যাদির উপরে জিওপলিটিক্স নির্ভর করলেও এখন সেটা পুরোপুরি মাইক্রোচিপের উপর নির্ভরশীল। আপনি মাইক্রোচিপ তৈরী করতে পারেন মানে আপনার উপর অনেকগুলো দেশ নির্ভরশীল হবে কিন্তু আপনি মাইক্রোচিপ তৈরী করতে পারেননা মানে আপনাকে কারও উপর নির্ভরশীল হতে হবেই।
[১] https://hackaday.com/2022/11/15/new-part-day-the-smallest-batteries-you-have-ever-seen/
0 Comments