Ticker

6/recent/ticker-posts

হারিয়ে যাওয়া এক পেশা নিদ্রা জাগানিয়া বা নকার আপার্স

যখন এলার্ম ঘড়ি আবিস্কার হয় নি কিংবা সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্য ছিল না, তখন সাধারণ খেটে খাওয়া অফিস কিংবা কল কারখানায় কাজ করা লোকদের সময় মতো ঘুম ভাঙাতো কে ? তাদের ঘুম থেকে তুলে দিত "নকার আপার্স" রা এরা ছিল ভাড়া করা জ্যান্ত এলার্ম ঠক ঠক ঠক, ওঠে পড়ো সাহেব, ভোর হয়ে গেছে.... এটাই ছিল তাদের পেশা  


ঊনবিংশ শতকে বিংশ শতকের প্রথম দিকে ইংল্যান্ডে আর আয়ারল্যান্ডে এদের দেখা যেত শিল্প বিপ্লবের পর যখন কল কারখানা তৈরি হল তখন মানুষেরও সকাল সকাল কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল ফলে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে হত ইংল্যান্ডের ঠান্ডা আবহাওয়ায় সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর খুব ভোরে কম্বলের তলায় সহজে ঘুম ভাঙার কথা নয় কিংবা ভাঙতও না  

ফলে কাজে যেতে দেরি হয়ে যেতো ফলে মাইনে কাটা যেতো কিংবা চাকরিও চলে যেত তখনই সৃষ্টি হল নকার আপার্স পেশার এদের বেশি দেখা যেত উত্তর ইংল্যান্ডে শিল্পাঞ্চলে যেখানে মানুষ কল কারখানায় শিফটে কাজ করত সাধারণতঃ বয়স্ক লোকজন, ভারী কাজের ক্ষমতা নেই কিন্তু রোজগারের দরকার এমন মানুষ ভোর হলেই এরা লোকজনের ঘুম ভাঙাতে বেরিয়ে পড়ত হাতে থাকত লগির মত লম্বা লাঠি বা বাঁশির মত একটা পাইপ বা নরম হাতুড়ি তখন বেশিরভাগ লোক দোতলায় ঘুমাতো তাই এরা সেই লম্বা লাঠি দিয়ে সাহেবদের শোবার ঘরের জানলায় ঠক ঠক করে / বার আওয়াজ করত সাহেবের ঘুম ভেঙেছে নিশ্চিত হয়েই পরবর্তী বাড়ির দিকে এগোতো  

কেউ কেউ আবার বাঁশির মত ফাঁপা পাইপে মটর দানা ঢুকিয়ে তাক করে কাঁচের জানলায় ছুড়ত ফলে ঘুম ভাঙতো আবার কেউ নরম হাতুড়ি দিয়ে সদর দরজায় কয়েকবার টাক টাক করে আওয়াজ তুলে ঘুম ভাঙাতো এরা কখনও খুব জোরে শব্দ করত না বা চেঁচাত না তাতে আশেপাশের লোকের ঘুম নষ্ট হলে আবার টাকা কাটা যেতো চুপিচুপি শুধু নিজ নিজ খদ্দেরের ঘুম ভাঙাতে আস্তে আস্তে নক করতে হতো ভোর পাঁচ থেকে ছটার মধ্যেই এদের কাজ সারতে হতো একজন নকার আপার কর্মি গড়ে ৩৫ থেকে ১০০ জনের ঘুম ভাঙাত কেউ কেউ আবার ঘুম ভাঙানোর জন্য রেগেও যেত, সুখনিদ্রা ভাঙানোর জন্য রাগটাও গিয়ে পড়ত এদের ওপর 


*লেখক স্বত্ত্বঃ- Mamun Rezwan
*সংগৃহীতঃ- ফেসবুক
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত

Post a Comment

0 Comments