এনভিডিয়া আর নোকিয়া মিলে টাই আপ আর বিনিয়োগ করছে ৬জি নিয়ে।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন — ৫জি নয়, বরং ৬জি।
এআই নেটওয়ার্ক তৈরিতে এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট একসঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
অনেকের কাছে একটু সারপ্রাইজিং লাগতে পারে ।
অনেকে ভাবে , নোকিয়া তো অনেক আগেই প্রায় অক্কা পেয়েছে !
অনেক স্পীকার , লেখক বা ট্রেইনার প্রায়ই নোকিয়ার নাম নেয় “কীভাবে একটি কোম্পানি ইনোভেশন না করলে ডুবে যায়” — এমন উদাহরণ হিসেবে। অনেকে আবার কোডাক-এর সঙ্গে একসঙ্গে নোকিয়াকে বসিয়ে দেন সেই “ব্যর্থতার”-এর তালিকায়।
শুনলেই আমার গা জ্বলে , ভাই একটু ত জাইনা দেখ আসল কাহিনী কি !
আসল ঘটনা ত আসলেই উল্টো।
আমি নিজে যখন নোকিয়া নেটওয়ার্কস-এর বিভাগে কাজ করতাম, তখন কাছ থেকে দেখেছি তাদের হ্যান্ডসেট ব্যবসার ( মূল নোকিয়া , আমরা নোকিয়া সিমেন্স এ ছিলাম ) পতন। সেটা ছিল ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের সময়কাল, আর পতনের মূল কারণ ছিল ম্যানেজমেন্ট ব্যর্থতা — ইনোভেশনের ঘাটতি নয়।
যখন “নোকিয়া” বলি, — নোকিয়া আসলে তিনটি বড় অংশে বিভক্ত: হ্যান্ডসেট ইউনিট, টেলিকম নেটয়ার্ক ইউনিট এবং গবেষণা+পেটেন্ট ( বিখ্যাত বেল ল্যাবস ও নোকিয়া হোল্ড করে )
নোকিয়া কখনোই ইনোভেশন বন্ধ করেনি।
বরং, তাদের ফোন ব্যবসার পতনের কারণ ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া, আর বাজারের পরিবর্তনের প্রতি সময়মতো খেয়াল না রাখা ।
তারা মিগো নামে একটি অপারেটিং সিস্টেমে বানাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় অ্যান্ড্রয়েড ওপেন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসল ।
নোকিয়া তখন সিম্বিয়ান ১০ বানাচ্ছিল , ২০০৮ সালেই অ্যান্ড্রয়েডের সাথে আলাদা সিরিজ ছাড়ার কথা শুনলাম । তারপর এনটাইটেলটেন্ড ম্যানেজমেন্ট কইল , নিজের ঘরেই থাকব ।
ম্যাঞ্জেমেন্ট আত্মতুষ্ট, আর সেই অহংকারের মূল্য দিতে হয় হাজারো কর্মীকে, বোনাস পাই না , ইঙ্ক্রিমেন্ট সব নাই , এই আর কি ।
তারপর এলো কর্পোরেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় “ট্রোজান হর্স” — স্টিফেন এলপ। তিনি মাইক্রোসফট থেকে এসে যা করার সব করলেন যেন নোকিয়ার হ্যান্ডসেট বিভাগ কাত হয়ে যায় ! শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফট সেই ডিভিশান ছয়গুণ কম দামে কিনে নেয়, এবং উইন্ডোজ ফোন নামে ফোন বাজারে আনে। ইলোপ বিশ হাজার চাকরি খেয়ে মাইক্রোসফটে গিয়ে আবার অই ডিভিশানের প্রধান হয়ে যান !
এদিকে নোকিয়া কিনে নেয় মটোরোলা-র ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি — যখন ৪জি দরজায় কড়া নাড়ছে! সিদ্ধান্তটা ছিল ভুল। কর্মীরা বোনাস হারান, অনেকেই চাকরি হারান, আর কোম্পানি টিকে থাকতে বাধ্য হয়ে লাভজনক ইউনিটগুলো বিক্রি করে দেয়, যার মধ্যে ছিল আমাদের ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক বিভাগও।
সিমেন্স-এর সঙ্গে তাদের জয়েন্ট ভেঞ্চার , যেখানে আমরা কাজ করতাম - ভালো রকম কালচারলা কনফ্লিক্টে পড়ে ।
তবুও নোকিয়া টিকে ছিল, এবং ভাল ছিল !
কীভাবে?
তার অসাধারণ গবেষণা, ইনোভেশন এবং পেটেন্টের কারণে।
অর্থাৎ, যেটাকে অনেকে নোকিয়ার দুর্বলতা শুনে এসেছেন , সেটাই আসলে তার সবচেয়ে বড় শক্তি।
অনেকে জানেন না, নোকিয়ার ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের বেশি পুরোনো। শুরু হয়েছিল একেবারে অন্যভাবে — টিস্যু, রাবার, এমনকি তিমির তেল বিক্রির মাধ্যমে। তারপর একের পর এক রূপান্তর ঘটিয়ে তারা পৌঁছে যায় টেলিকম দুনিয়ার শীর্ষে। এমনকি প্রথম ১৯৮৭ তে মোবাইল কলও হয়েছিল নোকিয়ার প্রযুক্তিতে।
এখন নোকিয়ার প্রযুক্তি সেই নেটওয়ার্ক চালায়, যেগুলোর মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোন কাজ করে।
ধরেন , প্রতিটি ৫জি ফোনের জন্য নোকিয়া গড়ে প্রায় ৩ ইউরো রয়্যালটি পায়।
একটি আইফোন বিক্রিতে নোকিয়া আয় করে প্রায় ১০ ডলার।
বছরে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ইউরো, যা তাদের মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ, আসে তাদের ২০,০০০-এর বেশি পেটেন্ট ও লাইসেন্সিং থেকে।
তাই পরের বার কেউ যদি বলে, “নোকিয়া তো ইনোভেশনে ব্যর্থ হয়েছিল,” তখন বলবেন , ভাই , একটু থামেন । ভুল মুখস্ত করা উদাহরণ দিয়েন না ।
উদাহারন টা অন্যরকম হবে ।
স্ট্রাটেজিক ম্যানেজমেন্ট এর ভুল এর কারণে কোম্পানি পড়ে গেলেও কেবল ক্রেজি ইনভেশান কালচার এর কারণে কীভাবে টিকে থাকে এবং খুটি গেড়ে বসে থাকে - নোকিয়া হইল এইটার উদাহরণ !
By:- Mahadib Hadi
*রিক্যাপ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত

0 Comments